ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মে মাসে আয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ

রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ৮.৯৫ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ৯ জুন ২০১৬

রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ৮.৯৫ শতাংশ

রহিম শেখ ॥ দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কারণে রফতানি আয়ে সুবাতাস বইছে। অর্থবছরের ১১ মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। গত ৮ মাস ধরে রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। একক মাস হিসাবে মে মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে দেশ থেকে ৩ হাজার ৬৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৮১৪ কোটি ডলার। প্রথম ১১ মাসের এই রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি। একক মাস হিসেবে মে মাসে ৩০২ কোটি ডলার রফতানি আয় হয়েছে। এই আয় গত ২০১৫ সালের মে মাসের ২৮৪ কোটি ডলারের চেয়ে বেশি। বৃহস্পতিবার রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে। জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি ছিল নেতিবাচক। সে মাসে আয় কমে যায় ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। তবে আগস্টে অবস্থার উন্নতি হতে শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত নবেম্বর শেষে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মাচ ও এপ্রিলে এ ধারা অব্যাহত ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার ২২ কোটি ডলার। সেই হিসাবে আলোচ্য সময়ে অর্জিত রফতানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি হয়েছে। এদিকে শুধু গত মে মাসে গত মে মাসে ৩০২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় ২০১৫ সালের মে মাসের ২৮৪ কোটি ডলারের চেয়ে ৬ দশমিক ৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ বেশি। গত এপ্রিল মাসে ২৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। এই আয় গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় ২৩৯ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের চেয়ে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের রফতানি আয়ের মধ্যে ৮১ দশমিক ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। আলোচ্য সময়ে খাতটির রফতানি আয় হয়েছে ২ হাজার ৫০৮ কোটি ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ২ হাজার ২৯১ কোটি ডলারের চেয়ে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। পোশাক খাত থেকে চলতি অর্থবছরে ২ হাজার ৭৩৭ কোটি ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা আছে। এ প্রসঙ্গে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু বলেন, রফতানি আয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান খুবই সন্তোষজনক চিত্র প্রকাশ করছে। পোশাক খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ভাল। তবে কৃষিপণ্যের চিত্র ভাল নয়। পণ্যটির মান নিয়ন্ত্রণ, মোড়কীকরণ ও তালিকাভুক্ত রফতানিকারকদের উন্নয়নের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে ভাল করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রফতানি আয় এসেছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের খাত থেকে। এ খাতের আয় ১০২ কোটি ৯২ লাখ ডলার। এই আয় গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের ১০৯ কোটি ডলারের চেয়ে ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ কম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরের (জুলাই-মে) তুলনায় চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে হিমায়িত খাদ্য রফতানি আয় ৪৮ কোটি ডলার অর্জিত হয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ৯ দশমিক ০৫ শতাংশ কমেছে। এ বিষয়ে হিমায়িত খাদ্যসংশ্লিষ্ট রফতানিকারকদের সংগঠন বিএফএফইএর সভাপতি এসএম আমজাদ হোসেন বলেন, চিংড়ি ও হিমায়িত মাছ রফতানি আয়ে আগামীতে আরও বড় ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে, যার প্রধান কারণ ইউরোপে মুদ্রার অবমূল্যায়ন। এ খাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ রফতানি আয় আসে ইউরোপ থেকে। আর এ অঞ্চল থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ দাম কম পেয়েছি আমরা; যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে রফতানি আয়ে। ইপিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য ৬৯ শতাংশ। এছাড়া টেক্সটাইল খাতে ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, পাট ও পাটজাত পণ্যে ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ, ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, রাবার ও রাবার পণ্য রফতানিতে ২৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, কাঠ ও কাঠজাত পণ্য রফতানিতে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। অন্যদিকে, কৃষি পণ্যে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, প্লাস্টিক পণ্য রফতানি ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ, পশম ও পশমি জাতীয় পণ্যে ৮৬.৭৯ শতাংশ, হোম টেক্সটাইল খাতে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। প্রসঙ্গত, প্রসঙ্গত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। তার মানে, অর্থবছরের শেষ মাসে ২৮৪ কোটি ডলার রফতানি আয় হলেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে। সর্বশেষ অর্থবছরে ৩ হাজার ১২০ কোটি ডলারের রফতানি আয় হয়েছে।
×