ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রস্তাবিত বাজেট

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৫ জুন ২০১৬

প্রস্তাবিত বাজেট

বাজেট সরকারের সম্পূর্ণ আর্থিক পরিকল্পনার একটি অংশ। এতে একটি নির্দিষ্ট টার্গেট থাকে। যা পূরণের চেষ্টা করা হয় বাজেটে। সরকারের আয় কম, ব্যয় বেশি। বরাবরই ঘাটতি বাজেট হয় এ দেশে। এবারও তিন লাখ চল্লিশ হাজার ছয় শ’ পঞ্চাশ কোটি টাকার বাজেটে ঘাটতি সাতানব্বই লাখ আট শ’ তিপ্পান্ন কোটি টাকা। এ দেশের বাজেট বাস্তবায়ন হয় ‘সেøায়ার গ্রোথ’ হিসেবে। তাই সরকারের রাজস্ব আদায়, আয়, উন্নয়ন ও ব্যয়ের যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হলে এ বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে না। বাজেট বাস্তবায়নের মূল বিষয়টি নির্ভর করে মূলত কর নীতির ওপর। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে শুল্ক আদায় সম্ভব হলে বাজেটে প্রস্তাবিত অর্থের সংস্থান করা কঠিন হয় না। সূক্ষ্ম সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে কাজ করলে রাজস্ব বোর্ডকে আরও সক্রিয় করা গেলে বাজেট বাস্তবায়নে সক্ষমতা বাড়বেই। অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, দেশের অগ্রযাত্রার চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করা গেছে। এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবানুগ কার্যক্রম। দেশবাসীও তাই চায়। এ বছর প্রবৃদ্ধি ছয় শতাংশের বৃত্ত ভেঙ্গে সাত শতাংশের মাইলফলক স্পর্শ করতে যাচ্ছে দেশ। বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও গত সাত বছরে আর্থ-সামাজিক খাতে ঘটেছে অভূতপূর্ব উন্নয়ন। এ সময় মাথাপিছু আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দারিদ্র্য কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। পাশাপাশি ঈর্ষণীয় হয়েছে সামাজিক বিভিন্ন সূচকে। প্রস্তাবিত বাজেটের তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে, এটি শুধু এখন প্রবৃদ্ধি বা উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছে না, সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠারও কথা বলছে। এ নিয়ে বিগত বছরগুলোতে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রীর আলোচনা থাকলেও এবারই প্রথমবারের মতো বাজেটের শিরোনামে স্থান পেয়েছে। বাজেটের নামায়ন করেছেন অর্থমন্ত্রী এই প্রথমবারÑ ‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা।’ অর্থমন্ত্রীর আকাক্সক্ষা, নয়া অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে সাত দশমিক দুই শতাংশ। নয়া অর্থবছরে বেসরকারী বিনিয়োগ বাড়বে, বৃদ্ধি পাবে প্রবাসী আয়, বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথগতিতেও রফতানি আয়ে আরও প্রবৃদ্ধি হবে, বাড়বে মানুষের ভোগ ব্যয়, থাকবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, কমবে মূল্যস্ফীতি এবং উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে ভ্যাট আদায়। এই আকাক্সক্ষা দেশবাসীর। বাজেটে ইতিবাচক দিক অনেক। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাজেট বরাদ্দ তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাড়ানো হয়নি। ফলে এই দুটি খাতে বরাদ্দের ক্রমাবনতি যদি বাজেটের প্রতিফলন হয়, তাহলে সমতামুখী সমাজের প্রাপ্তি দূরঅস্ত হবে। অন্যবারের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বড় হলেও এটি বিগত সাতটি বাজেটের ধারাবাহিকতারই অংশ। জাতীয় আয় বাড়ছে, তাই বাড়ছে অর্থনীতির আকারও। কর্মসংস্থানের গুণগত মান বেড়েছে। কর্মসংস্থানের পরিস্থিতিতে গুণগত পরিবর্তন এসেছে, যা বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক বার্তা বহন করে। বাজেটে সংবাদপত্র শিল্পের জন্য কোন সুসংবাদ নেই। দৈনিক পত্রিকার মূল বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি নতুন করে শ্রেণীবদ্ধ বিজ্ঞাপনেও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ শিল্পের জন্য কোন প্রণোদনা না থাকায় গভীর সঙ্কটে পড়বে সংবাদপত্র শিল্প। বাজেট মানেই একদিকে স্বপ্ন, অন্যদিকে শঙ্কা। আশা আর স্বপ্ন হাত ধরাধরি করে চলে। বাজেটে আশার জায়গা তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকে, আর তাতে ভর করেই মানুষ স্বপ্ন দেখে উন্নতি ও সমৃদ্ধির। অপরদিকে নতুন করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিংবা মূল্যস্ফীতির সংকেত মিলবে কিনা এমন শঙ্কাও সাধারণের মনে উঁকি দেয়। সার্বিক বিচারে প্রস্তাবিত বাজেট শিল্প ও ব্যবসাবান্ধব যেমন তেমনি জনবান্ধবও বলা যায়। যতই শঙ্কা ও সংশয় প্রকাশ করা হোক বাস্তবায়ন নিয়ে, তা অতিক্রম করে ইতিবাচক দিগন্ত তৈরি করবে বাজেট। যা এখনও সংশোধন যোগ্য। প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ও ত্রুটিগুলো পর্যালোচনা করে সংশোধন আনা হবেÑ এই প্রত্যাশা থাকছেই।
×