ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার

কমে আসছে সরকারের ব্যাংক ঋণ

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৫ মে ২০১৬

কমে আসছে সরকারের ব্যাংক ঋণ

রহিম শেখ ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে অগ্রগতি না থাকা ও সঞ্চয়পত্র বেশি বিক্রি হওয়ায় চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের নিট ঋণ কমেছে ৯ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত সরকারের নেয়া ঋণের কিস্তির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯৬ হাজার ১৩২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে সরকারের ঋণের স্থিতির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। পরে অবশ্যই ওইসব ঋণ শোধ করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, সরকার প্রতি অর্থবছরে ঋণ গ্রহণ করে। আবার ঋণ শোধ করে। এর মধ্যে যে অংশ বকেয়া থাকে সেটি স্থিতি হিসেবে ধরা হয়। প্রতিবছর সরকারের ঋণের অঙ্ক বাড়ায় বাড়ছে স্থিতির পরিমাণ। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকার নতুন বছরে ঋণ তো নেয়নি, বরং আগের ঋণ শোধ করেছে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বাজারে গিয়ে তা কয়েকগুণে বেশি অর্থের সৃষ্টি করে। কেননা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে হাই পাওয়ার্ড মানি বলা হয়। এ কারণে মূল্যস্ফীতির হার বাড়ে। কিন্তু এ বছরে সরকার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোন ঋণ নেয়নি। সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ব্যাংক-ব্যবস্থা থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে চায় সরকার। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ নেয়া হবে ২৮ হাজার কোটি টাকা, আর স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী বাজেটের ঘাটতি পূরণে এ ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এদিকে চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ ২৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা এবং স্বল্পমেয়াদী ঋণ ১৪ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা। গত অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। আর সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ধরা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছর ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহারে অনেক বেশি ব্যবধান থাকায় সেখানে বিনিয়োগ বেড়েছিল। অবশ্য গতবারও আশার তুলনায় সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে বেশি অর্থ আসায় অর্থবছর শেষে ব্যাংকে ঋণ কমেছিল ৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের ব্যাংক ঋণ বাড়লেও পরে তা কমতে থাকে। আলোচ্য সময়ে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে তার চেয়ে বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে সরকারের নিট ঋণ কমেছে। নির্দিষ্ট একটি সময় থেকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত নেয়া ঋণ নিট ঋণ হিসেবে বিবেচিত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এবার কি পরিমাণ ব্যাংক ঋণ নেয়া হবে সেটা আগেই বাজেটে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ব্যক্তি বিনিয়োগ উৎসাহিতে সরকারের উচিত হবে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে যত কম ঋণ করা যায়। এছাড়া ব্যাংক ঋণ যাতে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় না হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখা দরকার। কেননা ব্যাংক ঋণ অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যয় হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরে আগস্ট ছাড়া প্রতি মাসেই সরকার বেশি পরিমাণে ঋণ পরিশোধ করেছে। এপ্রিলে ৬ হাজার ৯০০, মার্চে ৪ হাজার কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, জানুয়ারিত ১ হাজার ৩০০ কোটি এবং ডিসেম্বরে দেড় হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে সরকার। এদিকে গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ঋণস্থিতি ১১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা কমে। অর্থাৎ এই পরিমাণ ঋণ সরকার পরিশোধ করেছে। এই বছর আগের বছরের তুলনায় কমেছে ৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে অর্থবছরের শেষদিকে এসে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই সময়ে এডিপি বাস্তবায়নে গতি আসবে। এই খাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। এছাড়া অষ্টম বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের চাপ পড়তে শুরু করেছে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে মোট এডিপি বরাদ্দ ৯৩ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারী অর্থায়ন ৬১ হাজার ৮৪০ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য ২৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা। অথচ ১০ মাসে মোট বরাদ্দ থেকে এডিবি বাস্তবায়ন মাত্র ৪৭ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বা ৫০ দশমিক ১২ শতাংশ। এর মধ্যে জিওবি ২৯ হাজার ৯৪৮ কোটি এবং প্রকল্প সাহায্য ১৫ হাজার ১৬০ কোটি। চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ১৫৫টি প্রকল্পের বিপরীতে এসব এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। এডিপি বাস্তবায়ন কম হওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থবছরের প্রথমভাগে এডিপি বাস্তবায়ন সব সময়ই কম হয়। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পরও অনেকের বিল বাকি থাকে। আমাদের একটা সমস্যা হচ্ছে সব কাজই শেষ সময়ে করতে অভ্যস্ত। প্রথম ১০ মাসে ৫০ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন হলেও শেষ দুই মাসে বেশি হবে। এতে বছর শেষে হয়ত দেখা যাবে ৯০ শতাংশের উপরে এডিপি বাস্তবায়ন হবে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ৩৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। আলোচ্য আট মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। গেল আট মাসে নিট ১৯ হাজার ৮৯০ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে সরকার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু বছর শেষে তা ২৮ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকায় ঠেকে।
×