ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

আইসিটি শিক্ষকহীনতা

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩ মে ২০১৬

আইসিটি শিক্ষকহীনতা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা আইসিটি বাংলাদেশসহ বিশ্বে এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে আসা শুধু নয়, সার্বিক তথ্যপ্রবাহের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এই আইসিটি। আগামী ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আইসিটির বিকাশ ও বিস্তারের পাশাপাশি দক্ষ প্রশিক্ষক গড়ে তোলা জরুরী। কিন্তু এ খাতে শিক্ষক এবং প্রশিক্ষকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। যেমন দেশের ২৭ হাজার এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪ হাজার প্রতিষ্ঠানেই আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক নেই। এমনকি শিক্ষক নিয়োগের অনুমোদনও নেই। বাকি ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক থাকলেও তাদের দক্ষতা তেমন নয়। এছাড়াও দেশের মোট ৩৩৩টি সরকারী হাই স্কুলে এবং ১৮টি সরকারী ইন্টারমিডিয়েট কলেজের প্রায় সবগুলোতে শিক্ষক ছাড়াই আইসিটি ও কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ে ‘পাঠদান’ চলছে, যা বিস্ময়কর বৈকি। কোন কোন প্রতিষ্ঠানে তো কম্পিউটার অপারেটররা এ বিষয়ে পাঠদান করছেন। সরকারী কলেজে খ-কালীন ভাড়াটে কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে এ বিষয়ে পাঠদান চলছে। মজার ব্যাপার যে, স্কুলপ্রতি দু’তিনজন শিক্ষককে এক বা দুই সপ্তাহের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নামকাওয়াস্তে এ প্রশিক্ষণ নিয়ে কম্পিউটার বিষয়ে মোটামুটি ধারণা লাভ করতে পারলেও শিক্ষার্থীদের ম্যানুয়ালি পাঠদান করতে পারছেন না। এমনিতেই সরকারী হাই স্কুল ও কলেজে শিক্ষক স্বল্পতা চরমে থাকায় তারা নিজ নিজ বিষয়েই নিয়মিত ক্লাস নিতে পারছেন না। ফলে কম্পিউটার শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা অর্জন বা পাঠদান শিক্ষার্থীদের নিজেদের ওপরই নির্ভর করছে। শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও শিক্ষক নিয়োগ না করেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ হতে একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার স্তর পর্যন্ত আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করেছে। এমনিতে দেশের কোন সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আইসিটি বিষয়ে শিক্ষক নেই, এমনকি এ বিষয়ে পদও সৃষ্টি করা হয়নি। প্রায় জেলার বিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিষয়ের কোন শিক্ষক নেই। এ বিষয়ের পদও সৃষ্টি করা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কম্পিউটার শিক্ষা চালু থাকলেও কম্পিউটার বিষয়ে একজন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া যাবে। তবে এজন্য সরকার অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে ছয় মাসের কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। এর ফলে আগে যারা তিন মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদেরও নতুন করে পুনরায় ছয় মাসের প্রশিক্ষণ নিতে হবে। সরকার জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নের আলোকে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে। কিন্তু শিক্ষক আর মেলে না। সরকারী হাই স্কুল ও কলেজে আইসিটি বিষয়ে স্থায়ী শিক্ষক নেই। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ও চুক্তিভিত্তিক বা খ-কালীন কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে দায়সারাভাবে আইসিটি বিষয়ে পাঠদান চলছে। আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে বাংলা, ইংরেজী, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষকরা আইসিটি বিষয়ের ক্লাস নিচ্ছেন। তবে সরকার থেকে স্বল্প মেয়াদে প্রশিক্ষণ নিলেও অষ্টম ও নবম শ্রেণীর আইসিটি পড়াতে পারছেন না সাধারণ শিক্ষকরা। এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দিয়ে যে আইসিটির পাঠদান করা যায় নাÑ এটা উপলব্ধি করা যেন দুরূহ হয়ে পড়েছে মন্ত্রণালয়ের জন্য। এদের দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেয়ার কোন পন্থা বের করা হয়নি। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে এসব কর্মকা- যে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠছে, তা অচিরেই টের পাওয়া যাবে। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্তার, বিকাশ ও দক্ষ মানব তৈরিতে যদি কর্মপন্থা নেয়া না হয়, তবে সবই বৃথা ও অর্থহীন।
×