ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৪ এপ্রিল ২০১৬

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন

রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রাম- এ দুটি শহরে সবচেয়ে বেশি ভবন বিদ্যমান। একইসঙ্গে এটাও বাস্তবতা যে উভয় মহানগরীজুড়ে রয়েছে সর্বাধিক সংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে রীতিমতো বিপর্যয় ঘটে যাবে এ দুটি শহরে। তাই বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করছেন দুই নগরবাসীদের। সিলেটও বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিমুক্ত নয়- এমন তথ্যই উঠে এসেছে বিবিসির প্রতিবেদনে। ঢাকা শহরে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় রয়েছে চার লাখের বেশি ভবন। রাজউক এলাকায় যে সংখ্যা ১২ লাখেরও বেশি; যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনীয় নয়। ঢাকার কোনো একটি ক্ষুদ্র এলাকাতেও যদি ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প হয় তাহলে ভবনে ভবনে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করা ভীষণ জটিল এক দুঃসাধ্য কর্ম হয়ে উঠতে পারে। বুয়েটের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সাড়ে সাত মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকার ৭২ হাজার ভবন ধসে পড়বে। যেখানে তৈরি হবে সাত কোটি টন কনক্রিটের স্তূপ। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের পর নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে প্রয়োজনীয় খোলা জায়গাও নেই ঢাকা শহরে। ভূমিকম্পের দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উন্মুক্ত জায়গা দরকার। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ঢাকা মহানগরীতে বড় ভূমিকম্প ব্যাপক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। তাই অবশ্যই জরুরী প্রস্তুতি থাকা চাই। গবেষণা বলছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ফল্ট জোন (ভূ-তাত্ত্বিক চ্যুতি) বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ৮ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পনে চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ প্রায় দেড় লাখ ভবন ভেঙ্গে পড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে ফল্ট জোনের (ভূ-তাত্ত্বিক চ্যুতি) যে অবস্থা তাতে এই অঞ্চলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা আছে। সাম্প্রতিক সময়ে ছোট আকারের ঘন ঘন ভূ-কম্পনও সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। আর যদি তেমন কিছু হয়, তাহলে চট্টগ্রাম ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। এখানকার দুই লাখ ভবনের তিন-চতুর্থাংশই ভেঙ্গে পড়বে। সর্বশেষ চট্টগ্রামে ভূমিকম্পে নয়টি ভবন হেলে পড়ার পর এ আশঙ্কা আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। তাই ঝুঁকি মোকাবেলায় এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া কর্তব্য। ভূমিকম্প বিষয়ে প্রস্তুতি ও সতর্কতার দিকটি মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। বিভিন্ন সময়ে ভূমিকম্পের পর কিছুদিন তোড়জোড় হয়। তারপর সেই আগের অবস্থা। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম নগরীর ৫৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের একটি তালিকা তৈরি করে পরের বছরের শেষ দিকে চসিককে হস্তান্তর করা হয়। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর টনক নড়ায় এই তালিকায় আরও ছয়টি ভবন যোগ হয়। সিটি কর্পোরেশনের ২০০৯ সালের ইমারত নিয়ন্ত্রণ বিধি অনুসারে- নগরীতে জরাজীর্ণ ভবন অপসারণের দায়িত্ব চসিকের; কিন্তু গত এক দশকে মাত্র দুটি ভবন অপসারণ করেছে ওই প্রতিষ্ঠান। এমন শম্বুক গতি আমাদের অসচেতনতার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত। ভূমিকম্প সম্পর্কে আমাদের যথাযথ প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় ও পরে কী করা উচিত, সে সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা প্রয়োজন। এ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার কার্যকর কোন উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। তাই এখনই ভূমিকম্পের সতর্কতা সম্পর্কে যথাযথ প্রস্তুতির ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের করণীয়ই প্রধান, তবে সমাজসেবক ও স্বেচ্ছাসেবীদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।
×