ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা!

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১১ এপ্রিল ২০১৬

উন্নয়ন প্রকল্পে স্থবিরতা!

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্টসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও এক বছরে ১০০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন অর্থই ব্যয় হয়নি। শুধু তাই নয়, কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে ১২১টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসব প্রকল্পের কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকলেও সমাপ্ত ঘোষণা করেছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো। এমনকি কিছু অর্থ ব্যয় হলেও মাঠ পর্যায়ে ১০৩টি প্রকল্পে কোন কাজই হয়নি। সম্প্রতি বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সংবাদগুলো তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল কোন দেশের জন্য কোনভাবেই সুখকর নয়। যেখানে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, যোগাযোগ খাতসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক কাজ নিরলসভাবে করে যাচ্ছে, সেখানে এই সংবাদটি সত্যিই দুঃখজনক। দেশে জাতীয় প্রবৃদ্ধি যেখানে ৭ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে সুসংবাদটির সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্পের এই স্থবিরতার খবরটি কোনভাবেই কাম্য নয়। এতে প্রকল্প গ্রহণের উদ্দেশ্য চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। সংবাদটি প্রমাণ করে দেশের যাবতীয় উন্নয়ন কর্মকা-ে এখনও কমবেশি স্থবিরতা বিরাজ করছে। এই ধরনের স্থবিরতা মূলত দেখা দেয়ার কথা বিদেশী পাইপলাইনে অর্থের ছাড় বিলম্বিত কিংবা আটকে গেলে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজে অদক্ষতা, সমন্বয়হীনতা দেখা দিলে কিংবা সরকারের অর্থ ছাড়ের বিলম্বের কারণে। এ ছাড়া প্রকল্প প্রণয়ন ও অনুমোদন পর্যায়েও এমন সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া কোন কোন প্রকল্পের দলিলে অংশভিত্তিক ব্যয় প্রাক্কলন বা কর্মপরিকল্পনা থাকে না। ফলে প্রকল্পের বাস্তবায়নে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে অনেক প্রকল্পের লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক যথাযথভাবে প্রণয়ন করা হয় না, অনেক সময় প্রস্তাবিত প্রকল্প দলিলের লক্ষ্যমাত্রা এমটিবিএফ-এ বরাদ্দ থাকে না, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যাবলী সম্পাদনের ক্ষেত্রে সক্ষমতার অভাব ইত্যাদি কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি হয়। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এ কারণে মানুষকে পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। কারণ যাই হোক, যথাযথ বাস্তবায়নের কারণে প্রকল্প স্থগিত বা উন্নয়ন কর্মকা- থেমে যাওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার শামিল। বাংলাদেশকে এখনও মধ্যম আয়ের দেশ বলা যায় না। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে উন্নয়নযাত্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ আরও কিছু পথ পাড়ি দিতে হবে। অর্থনৈতিক এই বাস্তবতায় দেশের উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় তার প্রধান সহযোগী বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নয়নের অংশীদার দেশ। বলা চলে দাতা সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশের সহযোগিতায়ই আমাদের বড় বড় উন্নয়ন কর্মকা- চলছে। এসব উন্নয়ন কর্মকা- গতিশীল রাখতে দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থা অনুকূল থাকা দরকার। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই, শিল্পকারখানায় নৈরাজ্য নেই, বরং বর্তমানে যে পরিস্থিতি চলছে তাতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার সুযোগ রয়েছে। অথচ প্রকল্পগুলো কোন কারণে বাস্তবায়ন বা কাজ শুরু করা না গেলে সেই অর্থ সংশ্লিষ্ট দেশ বা সংস্থার কাছে ফিরে যাবে এটা তো অর্থনীতির সহজ পাঠ। বিষয়টিকে সমগ্র উন্নয়ন প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতির অন্যতম একটি দুর্বলতা হিসেবে মনে হয়। প্রকল্পগুলো যে কারণে নেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট বাদ দিয়ে সমাপ্ত ঘোষণা করায় সেই সুফল থেকে বঞ্চিত হয়েছে দেশের মানুষ। এরকম সিদ্ধান্ত অর্থনীতির জন্য ভাল ফল বয়ে আনে না। এর কারণ খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হোক। উন্নয়ন কর্মকা- এভাবে স্থবির হয়ে পড়লে দেশ চলবে কিভাবে? এই অবস্থায় প্রত্যাশা, দেশের উন্নয়ন কাজ গতিশীল রাখতে বিষয়টি গভীরভাবে বিবেচনা করতে হবে এবং সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক হতে হবে।
×