ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

১০ এপ্রিল ইতিহাসে অনন্য

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১০ এপ্রিল ২০১৬

১০ এপ্রিল ইতিহাসে অনন্য

আজ ঐতিহাসিক ১০ এপ্রিল, প্রবাসী মুজিবনগর সরকার গঠন দিবস। ১৯৭১ সালের এদিন বাংলাদেশের মানুষের মমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রবাসে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গঠিত হয় এই সরকার। ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। সারা দেশে তান্ডব সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে তারা। দলে দলে লোক পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নেয়। তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সিদ্ধান্ত নেন প্রবাসী সরকার গঠনের। লক্ষ্য দেশকে হানাদারমুক্ত করা, বাঙালীর স্বাধীনতা নিষ্কণ্টক করা। সিদ্ধান্ত হয় ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (পরে মুজিবনগর) প্রবাসী এই সরকারের শপথ গ্রহণ ও আনুষ্ঠানিক যাত্রার শুরু করার। সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে ১৭ এপ্রিলের শপথের ব্যাপারে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৩ এপ্রিল ৬ সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম এবং মন্ত্রীদের মাঝে দফতর বণ্টন করা হয়। ১৪ এপ্রিল কর্নেল এমএজি ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। সরকার গঠনের পর শপথ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা পাই ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস। বাঙালী জাতির ইতিহাসের এক মহত্তম দিবস এটি। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের সীমান্ত লাগোয়া বৈদ্যনাথতলার এক বিশাল আমবাগানে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণের আয়োজন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয়। মন্ত্রী হিসেবে এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান প্রমুখ শপথ নেন। এই সরকারের নেতৃত্বে নয় মাস যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। রাজনৈতিক কর্মকা-, কূটনৈতিক ও প্রচার ক্ষেত্রে বিশ্ব জনমত গঠন করতে সক্ষম হয়েছিল অস্থায়ী সরকার। এই সরকারের দক্ষতার ফলেই মাত্র নয় মাসে বাংলাদেশ হানাদার পাকিস্তানীদের দখলমুক্ত হয়েছিল। তাই ১০ এপ্রিল সরকার গঠন ছিল অত্যন্ত দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। এর রয়েছে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতা। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজন ছিল অবিচল রাজনৈতিক নেতৃত্ব। সেই সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। যুদ্ধের নয় মাস তিনি সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও ছিলেন সাড়ে সাত কোটি মানুষের সত্তায়, ছিলেন মূল চালিকাশক্তিস্বরূপ। সেই সত্যই প্রতিষ্ঠিত হয় ১০ এবং ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে, যেখানে তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁকে নেতৃত্বে রেখে গঠিত হয় বিপ্লবী সরকার। শেখ মুজিবুর রহমানের নাম ধারণ করেই সেই সরকার হয় মুজিবনগর সরকার। স্বাধীনতার পঁয়তাল্লিশ বছর পর এই সরকার গঠন দিবস পালিত হচ্ছে নতুন আলোকে, নতুন প্রজন্মের চেতনাকে শাণিত করার লক্ষ্য নিয়ে। এদিন জাতি স্মরণ করবে তার মহান নেতাদের, যাঁদের শ্রমে, কর্মে, নিষ্ঠায় বাঙালী পেয়েছে স্বাধীন স্বদেশ। তাই ১০ এপ্রিল ইতিহাসে স্মরণীয়, অমলিন একটি দিন।
×