ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১

তিন দশকের ভূমি জরিপ

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তিন দশকের ভূমি জরিপ

বাংলাদেশে যেসব মামলা হয় তার মধ্যে বেশিরভাগই ভূমি বিষয়ক। দেশে সবচেয়ে বেশি খুনোখুনির ঘটনাও ভূমি বিরোধ সংক্রান্ত। বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে এই ভূমি বিরোধের কারণে। এর জন্য মূল দায়ী একটি সুষ্ঠু ভূমি জরিপ ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়া। স্বাধীনতার পর দেশে প্রথমবারের মতো ভূমি জরিপ শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। ওই বছর জরিপ কাজ হাতে দেয়া হয় বৃহত্তর ফরিদপুর, বৃহত্তর যশোর ও বৃহত্তর বগুড়া জেলায়। ৩০ বছর আগে বরিশাল জেলায় জরিপ কাজ শুরু হয়। একই সঙ্গে নোয়াখালী, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, বগুড়া, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর, রংপুর জোনের কাজও। দিনাজপুরে জরিপ কাজ এখনও শুরু করা হয়নি। কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহের জরিপ কাজ ঝুলে আছে। অবশ্য চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে জরিপ কাজ শেষ হয়েছে। ১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া ঢাকা মহানগরী জরিপ ছাড়া বাকি কোন জরিপ এখনও শেষ হয়নি। ঢাকা মহানগরী জরিপ ইতোমধ্যেই শতভাগ সম্পন্ন হলেও এ জরিপে বেশ কিছু সরকারী সম্পত্তি ব্যক্তি বিশেষের নামে রেকর্ড হওয়ার অভিযোগে বিষয়টি নিয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে। তার মানে সমস্যার এখনও সমাধান নেই। ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের দাবি, প্রয়োজনীয় জনবলের অভাবে জরিপ কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। এটা যেন পুরনো অজুহাত বার বার তুলে ধরা, যে জনবল আছে সে পরিমাণ কাজের পরিসংখ্যান কি তা সহজেই অনুমেয়। আমাদের দেশে ভূমি খাতে দুর্নীতির বিষয়টি সবাই অবহিত। যার সামান্য এক টুকরো জমি আছে, তিনি ওই জমি সংক্রান্ত কাগজপত্র বিধিসঙ্গত করাতে গিয়ে ঘুষ-দুর্নীতির শিকার হননিÑ এমন নজির বিরল। জমি নিবন্ধন, নাম জারি, জরিপ ইত্যাদি প্রতিটি ক্ষেত্রে জমির মালিককে এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজের কাছে যেতে হয়। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা যায়, ভূমি সংক্রান্ত যে কোন সেবা পেতে মানুষকে ১০০ টাকা থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। অভিযোগ রয়েছে ভূমি জরিপের সময় জরিপকর্মী কর্তৃক জমির পরিমাণ কম দেখানো ও খতিয়ানে ভুল তথ্য লেখার ভয় দেখানো হয়। ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, ঘুষের বিনিময়ে খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতার সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগ নেই। মানুষ তার কর্ম সংক্রান্ত ব্যবহারিক জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রায়ই এসব অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন। এ বাস্তবতায় মানুষকে জমি সংক্রান্ত দুর্ভোগ, হয়রানি ও ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য ভূমি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ কথা সত্য যে, ভূমি জরিপের ক্ষেত্রে গত তিন দশকে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। তাই এই অবস্থায় থেমে না থেকে দ্রুত জরিপ ও ভূমি রেকর্ড কাজ সম্পন্ন করা দরকার। এই ক্ষেত্রে জনবল নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো যথাযথ বিবেচনার দাবি রাখে। ভুলে গেলে চলবে না দেশে জনসংখ্যার তুলনায় জমির পরিমাণ সীমিত। তাই জমি নিয়ে বিরোধ, সংঘর্ষ ও দুর্নীতিও এখানে বেশি। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া না হলে আগামীতে এসব আরও বাড়বে। জরিপ কাজ সম্পন্নের ব্যাপারে যত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায় ততই ভাল। ভূমি খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকারের উচিত বিষয়গুলো আমলে নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
×