ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জয়পুরহাটে সাত সেচ প্রকল্প বন্ধ ॥ ৭ কোটি টাকার সম্পদ লোপাট

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩০ জানুয়ারি ২০১৬

জয়পুরহাটে সাত সেচ প্রকল্প বন্ধ ॥ ৭ কোটি টাকার সম্পদ লোপাট

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ২৯ জানুয়ারি ॥ এরশাদ সরকারের আমলে মন্ত্রণালয়ের এক কলমের খোঁচায় ৭টি হালকা সেচ প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় সেচ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত ১২ হাজার বিঘা ইরি জমি। অপরদিকে এই ৭টি হালকা সেচ প্রকল্প পরিচালনার জন্য কর্মকর্ত-কর্মচারীদের জন্য নির্মিত আবাসন ও সেচ যন্ত্রপাতি সংরক্ষণের অবকাঠামো দেখভালের অভাবে হরিলুট হয়ে গেছে। আবাসন প্রকল্পের দরজা জানালা চুরি হতে হতে এখন শুধু দেওয়াল সর্বস্ব দালান রয়ে গেছে। একইভাবে এই প্রকল্পের জন্য নির্মিত প্রায় ২০ কিলোমিটার সেচ নালার প্রায় সবগুলোরই ইট চুরি হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭ কোটি টাকার সরকারী সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে। জানা যায়, জয়পুরহাটের তুলসীগঙ্গা, ছোট যমুনা ও হারাবতি নদী তীরবর্তী এলাকার জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল ইউনিয়নের মামুদপুর হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৬০০ বিঘা, পাথুরিয়া হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৯০০ বিঘা, বনখুর হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৬০০ বিঘা, পাঁচবিবি উপজেলার মহিপুর হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৯০০ বিঘা, ভারাহুত হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৩০০ বিঘা, ক্ষেতলাল উপজেলার তেলাবদুল হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৬০০ বিঘা, আক্কেলপুর উপজেলার হলহলিয়া হালকা সেচ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৯০০ বিঘা জমি হলাকা সেচ প্রকল্পের আওতায় নেয়া হয়। এই ৭টি স্থানে কৃষকদের সেচ সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে ৭টি হালকা সেচ প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে চালু করা হয়। এ প্রকল্পগুলো চালু হওয়ায় প্রায় ১২ হাজার বিঘা জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসে। লো-লিফ্ট (হালকা সেচ)-এর মাধ্যমে প্রায় ২০ হাজার কৃষক সেচ সুবিধা পায়। এ সেচ প্রকল্পগুলোকে ঘিরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুব্যবস্থা ও সেচ যন্ত্রপাতি বসানোর জন্য অবকাঠামো নির্মাণ হয়। কৃষকদের জমিতে সেচের জন্য নির্মিত হয় পাকা সেচনালা। প্রকল্পটি চালু হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সেচ সুবিধা পাওয়ায় তাদের ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়। কৃষকরা যখন এই হালকা সেচ প্রকল্পগুলো থেকে সুফল পেতে শুরু করে তখনই আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তে এই ৭টি প্রকল্প বন্ধ করে সৈয়দপুরে এর কিছু সেচ যন্ত্রপাতি স্থানান্তর করা হয়। একইভাবে জনবলও স্থানান্তর করা হয়। ফলে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। কৃষকরা এই সেচ প্রকল্প থেকে সকল সুবিধা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জনবল স্থানান্তরিত হওয়ায় এই প্রকল্প অবকাঠামো দেখভাল করার লোকজন না থাকায় অল্পদিনের মধ্যে ৭টি প্রকল্প এলাকা ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়। দিনের পর দিন চুরি হতে থাকে অবশিষ্ট যন্ত্রাংশসহ আবাসনের দরজা-জানালা ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। ২/১টি নালা থাকলেও চুরি হয়ে যায় পাকা অধিকাংশ সেচনালার ইট। একই সঙ্গে প্রায় ১৪ বিঘা সেচনালার জমি দখল হয়ে যায়। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার হাজার হাজার সুবিধাভোগী কৃষককে বছরের পর বছর উচ্চমূল্যে সেচ সুবিধা নিয়ে ফসল উৎপাদন করতে হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এলাকার একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এই সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত জমি কৃষকরা খুব অনায়াসেই চাষাবাদ করতে পারত। কিন্তু সেচ প্রকল্পিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যক্তি মালিকানা সেচ যন্ত্র থেকে অধিক মূল্যে তাদের সেচের পানি নিতে হচ্ছে। এলাকার কৃষকরা অবিলম্বে এই সেচ প্রকল্পগুলো চালু করে কৃষকদের স্বল্প মূল্যে পানি দেয়ার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে।
×