ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

অবশেষে চট্টগ্রামে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি  স্থগিত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রামে বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে সৃষ্ট অচলাবস্থা অবশেষে কেটেছে। সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে বিএমএ (বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন) নেতৃবৃন্দের ফলপ্রসূ আলোচনার পর লাগাতার কর্মসূচী থেকে সরে আসেন চিকিৎসকরা। সম্মানজনক সুরাহার চেষ্টার আশ্বাসে এক সপ্তাহের জন্য কর্মসূচী স্থগিত করেছেন আন্দোলনকারীরা। অবহেলাজনিত কারণে নগরীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে রবিবার ছিল লাগাতার কর্মবিরতির ৫ম দিন। এদিন সকালে চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ’র ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় চিকিৎসক ও চিকিৎসা পেশাজীবী সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। তিনি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন। চিকিৎসকরা একটি সম্মানজনক সুরাহা প্রত্যাশা করেন। মেয়রও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করলে কর্মসূচী স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয় বিএমএ’র পক্ষ থেকে। বিএমএ চট্টগ্রামের সভাপতি ডাঃ মুজিবুল হক খান এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, ৩ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচীতে সাধারণ রোগীদের কষ্টের বিষয়টি চিকিৎসক সমাজ অনুভব করেন। চিকিৎসকরাও এ ধরনের কর্মসূচী পালন করতে চান না। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির একটি সুরাহা প্রয়োজন। তিনি জানান, মেয়র একটি সম্মানজনক সমাধানের চেষ্টা করবেন এমন আশ্বাস দিয়েছেন। আমরাও তাঁর সম্মান ও রোগীদের দিকটি বিবেচনা করে কর্মসূচী স্থগিত করেছি। রবিবার বিকেল থেকেই বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাইভেট প্রাকটিসে যোগ দিচ্ছেন। চট্টগ্রামে বেসরকারী হাসপাতালে ও প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসকরা সেবা প্রদান বন্ধ করেন গত বুধবার। এতে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় রোগীদের। প্রাইভেট প্র্যাকটিসও বন্ধ থাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ে। বিশেষ করে হঠাৎ রোগাক্রান্ত হওয়া রোগীরা পড়েন বিপদে। চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগীদের স্বজনদের মাঝেও ক্ষোভের সঞ্চার করে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাদের কর্মসূচীতে অনড় থাকেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সকল ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেসরকারী হাসপাতাল-ক্লিনিকে রোগীরা চিকিৎসা না পাওয়ায় রোগীদের উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয় চমেক হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও সকল সরকারী হাসপাতালে। তাই বাড়তি চাপে হিমশিম অবস্থা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম শনিবার রাতে চট্টগ্রামের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনকে টেলিফোন করে সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগ নিতে বলেন। মেয়র রাতেই ফোন করেন বিএমএ নেতৃবৃন্দকে। এরই ধারাবাহিকতায় মেয়র রবিবার বিএমএ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেন। তাদের সমাবেশে উপস্থিত হন। মেয়রের সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি কলিম সরওয়ার, সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী ও সাংবাদিক নেতারাও। বিএমএ’র পক্ষে ছিলেন চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি ডাঃ মুজিবুল হক খান ও সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ শরীফসহ নেতৃবৃন্দ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শাহানা আরা চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ বিশ্বজিৎ দত্ত, বিএমএ’র সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোহাম্মদ শরীফ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডাঃ খুরশিদ জামিল প্রমুখ। আন্তরিকতাপূর্ণ এই সমাবেশে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সঙ্কট উত্তরণের উপায় বের করার আশ্বাস দেন মেয়র। এতেই অচলাবস্থার অবসান হয়। এর আগে গত শনিবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ সম্মানজনক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচী অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছিলেন। সম্মানজনক এই সুরাহা কেমন হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে তারা জানিয়েছিলেন, একজন বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসক দিয়ে করা তদন্তে যদি চিকিৎসায় ভুল প্রমাণিত হয় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থায় তাদের আপত্তি নেই। এদিকে, চিকিৎসকদের কর্মসূচী প্রত্যাহারের পর চাঞ্চল্য ফিরে আসে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে। রোগী ও স্বজনদের মধ্যে ফিরে আসে স্বস্তি। বিকেল থেকেই রোগী ও স্বজনদের প্রাইভেট হাসপাতালমুখী হতে দেখা যায়। চারদিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়ায় রোগীদের চাপও অত্যধিক পরিলক্ষিত হয়। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর বেসরকারী সার্জিস্কোপ হসপিটালে গত ৯ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন মেহেরুন্নেসা নামের এক প্রসূতি। সিজার করে সন্তান প্রসবের পর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তিনি প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির ছোট ভাই খায়রুল বশরের কন্যা। চিকিৎসকের অবহেলায় এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ মৃতের পরিবারের। এর জন্য প্রধানত হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মাহবুবুল আলম ও ডাঃ শামীমা রোজীকে দায়ী করেন মৃতের স্বজনরা। ক্ষুব্ধ স্বজনরা সেদিন ওই হসপিটালে ভাংচুরও করেন। সিএমপির পাঁচলাইশ থানায় এ ব্যাপারে সার্জিস্কোপ হসপিটালের ডাঃ মাহবুবুল আলম, ডাঃ শামীমা রোজী ও ডাঃ রানা চৌধুরীকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে ডাঃ রানার বিরুদ্ধে অপারেশনের পর রোগীর পেটে ব্যান্ডেজ রেখে দেয়ার অভিযোগ আনা হয়। আর এই মামলা দায়েরের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় চিকিৎসক মহলে। এর জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।
×