
কুড়িগ্রাম জেলায় পানির সংকটে পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। অনেক কৃষক জমির পাট কাটার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও পাট কাটছেন না, আবার কেউ কেউ কাটা পাট সড়ক কিংবা বাড়ির উঠানে স্তুপ করে রেখেছেন।
পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় পাটের গুণগত মান নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে, ফলে দামও কমে যেতে পারে। এমনিতেই এবছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম জমিতে পাট আবাদ হয়েছে, ফলে পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন কৃষকরা।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ এলাকায় খরার কারণে জলাশয়, ডোবা ও নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত পানি নেই। বিশেষ করে উপজেলার আওনা ও পিংনা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় এই সংকট আরও প্রকট।
তবে ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, বারোমাসিয়া ও নীলকমল নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চল এবং চর ও দ্বীপচর এলাকায় দুই সপ্তাহ আগে থেকেই কৃষকরা পাট কেটে জাগ দিতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে যেসব এলাকায় পানি নেই, সেসব এলাকার কৃষকরা বৃষ্টির আশায় কাটা পাট জমা করে রেখেছেন। সময় যত গড়াবে, পাটের মান ততই নিচে নামবে এবং বাজারে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হবেন তারা।
কিছু কৃষক অতিরিক্ত টাকা খরচ করে পাট ভ্যান, পিকআপ বা পাওয়ার ট্রিলারযোগে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের জলাশয়ে নিয়ে গিয়ে জাগ দেয়ার চেষ্টা করছেন।
উলিপুর উপজেলার পানিমাছকুটি এলাকার কৃষক হাফিজুল ইসলাম ও ইউনুস আলী জানান, তারা দু’জনেই দেড় বিঘা জমির পাট কেটে গত চার-পাঁচ দিন ধরে বাড়ির পাশে সড়কের ধারে স্তুপ করে রেখেছেন। যদিও দুই-তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তবে এলাকায় ডোবা বা নালায় এখনও পর্যাপ্ত পানি হয়নি।
ধরলা পাড়ের আরাজি পলাশবাড়ি এলাকার কৃষক আবদুল হামিদ জানান, পানির অভাবে এখনও জমির পাট কাটেননি। অথচ এক সপ্তাহ আগেই পাট কেটে ফেলা দরকার ছিল।
চন্দ্রখানা মুসুল্লিপাড়ার কৃষক সামিউল ইসলাম বেনু বলেন, "দুই বিঘা জমির পাট দু’দিন আগে কেটেছি। সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে শিমুলবাড়ী এলাকার একটি বিলে পিকআপে করে নিয়ে গিয়ে জাগ দিয়েছি। এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বিলে পর্যাপ্ত পানি নেই, তবুও বাধ্য হয়ে জাগ দিচ্ছি।"
গজেরকুটি এলাকার কৃষক কিশোর চন্দ্র রায় ও ধীরেন চন্দ্র রায় জানান, “দুই-তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে বটে, কিন্তু এখনও পাট জাগ দেওয়ার মতো পানি হয়নি। আমরা পাট কেটে ডোবার পাশে রেখেছি। পানি হলেই জাগ দেব।”
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, “এ বছর কুড়িগ্রাম জেলায় ১৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর কম আবাদ হয়েছে। তার ওপর খরার কারণে পাট জাগ দিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে খুব শিগগিরই জলাশয় ও বিলগুলো পানিতে ভরে যাবে। তখন কৃষকদের আর সমস্যা থাকবে না।”
শেখ ফরিদ