ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

শেরপুরে বিলুপ্তির পথে বাঁশের ঘরোয়া শিল্প, টিকে থাকার লড়াইয়ে শতাধিক পরিবার

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০০:১১, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ০০:১১, ৩০ জুন ২০২৫

শেরপুরে বিলুপ্তির পথে বাঁশের ঘরোয়া শিল্প, টিকে থাকার লড়াইয়ে শতাধিক পরিবার

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

শেরপুরের বিভিন্ন গ্রামীণ জনপদে যুগের পর যুগ ধরে বাঁশ দিয়ে তৈরি হয়ে আসছে নানান ধরনের ঘরোয়া সামগ্রী। একসময় এই শিল্প ছিল প্রয়োজন ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায়, বাজারে প্লাস্টিক ও লোহার সামগ্রীর দাপটে এখন এই শিল্প পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। বিশেষ করে নকলা, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ী উপজেলায় শতাধিক পরিবার এখনও এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল হলেও তা দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে।

বাঁশ দিয়ে তৈরি ডালা, কুলা, চালুনি, খাঁচি, চাটাই, মাছ ধরার ঝুড়ি কিংবা কাঁচা ঘরের মাচাসহ নানা ধরনের সামগ্রীর একসময় ছিল ব্যাপক চাহিদা। কিন্তু বর্তমানে ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় কারিগরেরা।

শ্রীবরদী উপজেলার বাঁশ শিল্পী খোকা মিয়া বলেন, বাঁশ কেটে কাটাই করে জিনিস বানাতে অনেক সময় লাগে, কিন্তু লাভ হয় না। আগের মতো বিক্রি নেই। প্লাস্টিকের ডালার সামনে আমাদের কুলা আজ বাতিল মাল হয়ে গেছে।

শ্রীবরদীর বাঁশ শিল্পী আনোয়ার মিয়া বলেন আগে যেভাবে মানুষ বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করত, এখন আর তেমন ব্যবহার করে না। প্লাস্টিক, লোহা আর অন্যান্য আধুনিক সামগ্রী এসে পড়ায় আমাদের এই বাঁশ শিল্প অনেকটাই পিছিয়ে গেছে। একসময় এই শিল্প দিয়েই সংসার চলত, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুটত। কিন্তু এখন তো কষ্ট করেও তার দাম পাওয়া যায় না। মানুষের আগ্রহ কমে গেছে, আর শ্রমের মূল্যও নাই। সরকার বা কোনো সংস্থা যদি এই শিল্পকে রক্ষা করার জন্য প্রশিক্ষণ, পুঁজি আর বাজার তৈরি করে দেয়, তাহলে আবার বাঁচতে পারে আমাদের মতো বাঁশ শিল্পীরা। না হলে এই ঐতিহ্য একদিন পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।

বাঁশ ও বেতশিল্প শুধু ঐতিহ্য নয়, এটি একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব শিল্প। একটু পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখান থেকে অনেক পরিবার স্বাবলম্বী হতে পারে। শিল্পটি টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো দক্ষ কারিগরের অভাব। নতুন প্রজন্ম এই পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছে। পাশাপাশি রয়েছে প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তির ঘাটতি, আর্থিক অনিশ্চয়তা ও ডিজাইনের অভাব।

যদিও কিছু কিছু এলাকায় এনজিও, সমাজসেবা অধিদপ্তর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সীমিত বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় বাঁশ শিল্পীরা  মনে করেন, বাঁশ শিল্পের আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বিপণন কার্যক্রম চালু করা হলে এই শিল্প আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

এই ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ শিল্পকে বাঁচাতে হলে এখনই প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা। নইলে খুব শিগগিরই গ্রামবাংলার চেনা বাঁশের ডালা, কুলা, চাটাইয়ের অস্তিত্ব থাকবে কেবল স্মৃতির পাতায়।

মিরাজ খান

×