ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৯ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

জামালপুরে ধর্ষণ মামলার বাদীর বাড়িতে হামলা, আহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ইসলামপুর, জামালপুর

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৮ জুন ২০২৫

জামালপুরে ধর্ষণ মামলার বাদীর বাড়িতে হামলা, আহত ৫

ছবি: সংগৃহীত।

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় ধর্ষণ মামলার বাদীর বাড়িতে অতর্কিত হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ৫ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত চারজন জামালপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আহতরা হলেন—ইসলামপুর উপজেলার পলবান্ধা ভাটিপাড়া এলাকার মৃত আ. মোমেনের ছেলে ও ইসলামপুর ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত আরবি সহকারী শিক্ষক মো. আ. মালেক (৭০), তাঁর দুই ছেলে আল আমিন (৩৫) ও মাহমুদুল হাসান (২৮), এবং মেয়ে মাসুদা আক্তার (৩২)। মাহমুদুল হাসানের স্ত্রী প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে ওঠেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১ জানুয়ারি মাহমুদুল হাসানের ২০ বছর বয়সী বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বোনকে অপহরণ করে অজ্ঞাত ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা। পরদিন তাঁর বাবা আ. মালেক ইসলামপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে পার্শ্ববর্তী মেলান্দহ উপজেলার শাপলা মার্কেট এলাকা থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর ইশারা ও ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে।

এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি মাহমুদুল হাসান বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (২০০০ সালের সংশোধিত ২০২০) এর ৭/৯(১)/৩০ ধারায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ তদন্ত করে ১৯ ফেব্রুয়ারি আবুল কালামের ছেলে মো. সবুজ (২১) এবং ১১ জুন আব্দুল গফুরের ছেলে মুজাহিদুল (২৮)-কে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়।

২৫ জুন আদালত মুজাহিদুল ও সবুজের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে, পরদিন তাদের স্বজনরা বাদীর বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বাড়ির গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করে এবং পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। ঘরের আসবাবপত্র ও অর্থসম্পদও লুট করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আহতদের মধ্যে চারজনের অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইসলামপুর হাসপাতাল থেকে জামালপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এই ঘটনায় আ. মালেকের ছেলে আতিকুল্লাহ বাদী হয়ে ২৬ জুন ইসলামপুর থানায় ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩২৫/৩২৬/৩০৭/৪২৭/৫০৬(২)/১১৪/৩৪ ধারায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৩–৪ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। নাম উল্লেখিত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন: ইলিয়াস, মো. সজিব, মো. মোখলেছুর রহমান, মো. আবু সামাদ, মো. আ. মোতালেব, মো. হাফিজুর, মো. রমজান, মো. কালু, মোছা. কমলা বেগম, মোছা. বানেছা বেগম, মোছা. খাদিজা বেগম, মো. মোস্তফা, আবু কালাম, মো. শাহীন, মোছা. শাপলা, কবিতা, ফাহিমা, ফুলেছা বেগম ও মর্জিনা বেগম।

পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে কমলা বেগম, খাদিজা খাতুন ও আবু সামাদকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়। তবে বাকি ১৬ জন আসামি এখনও গ্রেফতার হয়নি এবং তারা প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ধর্ষণ মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমার বাক ও বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বোনকে অপহরণ করে প্রতিবেশী মোতালেবের ঘরে রাতভর গণধর্ষণ ও নির্যাতন চালানো হয়। পুলিশের তদন্তে দুইজনকে গ্রেফতার করা হলেও আরও অনেকেই জড়িত রয়েছে। আমরা চাই, জামালপুর ডিবি ও র‍্যাব ছায়াতদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হোক।”

আতিকুল্লাহ বলেন, “আমাদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৫ জনকে আহত করেছে এবং অর্থ ও মালামাল লুট করেছে। মামলা করার পর আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরছে, এমনকি আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মিথ্যা মামলার হুমকি দিচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে বলছে—মামলা তুলে না নিলে আমাদের খুন করা হবে। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”

তিনি আরও বলেন, “ধর্ষণের বিচার চাওয়া কি অপরাধ? প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন—আমাদের রক্ষা করুন।”

ইসলামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আ.স.ম. আতিকুর রহমান শনিবার (২৮ জুন) বিকাল ৫টায় মুঠোফোনে বলেন, “হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে তথ্যপ্রযুক্তি সহায়তায় অভিযান চলছে।”

এ ঘটনায় মামলার বাদী ও ভুক্তভোগী পরিবারের প্রতি সহানুভূতির পাশাপাশি দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।
 

সায়মা ইসলাম

×