
ছবি:সংগৃহীত
দৃষ্টিহীন মশিউর রহমান লিমন। বয়স ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে। শুনে শুনে মুখস্থ করেছেন পবিত্র কুরআন। এখন সেই কুরআনের আলো ছড়িয়ে দিতে ছুটে চলেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানে। ইতোমধ্যেই তিনি শিক্ষা দিয়েছেন ৭০০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীকে। এভাবে দেড় যুগ ধরে কুরআনের আলো ছড়াচ্ছেন অন্ধ হাফেজ মশিউর।
সম্প্রতি গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম (পঁচার বাজার) জামিয়াতুল হোসাইনিয়া মারকাজুল উলুম হাফিজিয়া কওমি মাদরাসা ও এতিমখানায় দেখা যায় কুরআনের পাঠদানে ব্যস্ত এই হাফেজকে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাতগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মশিউর রহমান লিমন ২০০১ সালে এক মাদরাসা শিক্ষকের কাছে শুনে শুনে কুরআন মুখস্থ করে হাফেজ হন। চোখে দেখতে না পেলেও বিভিন্ন মাদরাসা ও গ্রামে ঘুরে ঘুরে শিক্ষার্থীদের কুরআন শিক্ষা দিয়ে আসছেন তিনি। এ কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত সামান্য হাদিয়াই তার সংসারের ভরসা।
স্বজনরা জানান, প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাড়াহুড়া করে মাদরাসার পথে রওনা হন মশিউর। কখনও একা, কখনও কারো সাহায্যে হেঁটে মাদরাসায় পৌঁছান। সেখানে শিক্ষার্থীদের কুরআনের পাঠ দেন। তার ছয় সদস্যের পরিবারে আছেন স্ত্রী, তিন ছেলে ও মা। ‘অন্ধ হাফেজ’ নামেই এলাকায় পরিচিত তিনি। ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলে তাকে দাওয়াত দেন স্থানীয়রা। কোনো পারিশ্রমিক না নিয়েই তিনি জলসায় কুরআনের আলো ছড়ান। কুরআন প্রচারে তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
তার শিক্ষার্থী নাঈম ইসলাম বলেন, "হুজুরের ক্লাসে অনেক ভালো লাগে। তার কণ্ঠে তিলাওয়াত শুনে আমরা মুগ্ধ হই, বিশেষ করে তার আজান শুনে মন ভরে যায়। হুজুরের মাধ্যমে শত শত ছাত্র কুরআন শিখেছে।"
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ মিয়া বলেন, "মশিউর আমার বন্ধু। আমার চোখ থাকতেও কুরআন পড়তে জানি না, আর সে অন্ধ হয়েও কুরআনের আলো ছড়াচ্ছে। তার সংগ্রাম দেখে আমরা গর্বিত। সে আমাদের গ্রামের অহংকার।"
দৃষ্টিহীন হাফেজ মশিউর রহমান লিমন বলেন, "যে ব্যক্তি দুঃখকে জয় করতে পারে, তার কাছেই সুখ ধরা দেয়। আমি দুঃখকে জয় করেছি বলেই আজ পরিবার নিয়ে সুখে আছি, মাদরাসা থেকে পাওয়া চার হাজার টাকার হাদিয়াই আমার জীবনের ভরসা।"
তিনি আরও বলেন, "শিক্ষার্থীদের কুরআন তিলাওয়াত শেখানো এবং বিভিন্ন জলসায় ইসলামী আলোচনা করাই আমার মূল কাজ। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ কাজই করে যেতে চাই।"
সাদুল্লাপুর উপজেলার ভাতগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজার রহমান মাফু বলেন, "মশিউর রহমান খুব শান্ত স্বভাবের মানুষ। অভাবের সঙ্গে লড়েই চলতে হয় তাকে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে সবসময় সহযোগিতা করা হয়।"
মারিয়া