ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

জাদুশিল্পীদের মিলনমেলা, উচ্চারিত হলো ঐক্যের স্লোগান

মো. সোহাগ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ২৮ জুন ২০২৫

জাদুশিল্পীদের মিলনমেলা, উচ্চারিত হলো ঐক্যের স্লোগান

“জাদু শিল্পের উন্নয়নে আমরা সবাই এক”—এই প্রতিপাদ্য নিয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো এক মনোমুগ্ধকর ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান। দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা খ্যাতিমান ও উদীয়মান যাদুশিল্পীদের প্রাণবন্ত অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে উঠেছিল রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির কনফারেন্স মিলনায়তন।

অনুষ্ঠানটি ছিল শুধুই আনন্দের উপলক্ষ নয়, বরং জাদু শিল্পের ভবিষ্যৎ ও সম্ভাবনা নিয়ে এক আন্তরিক আলোচনার প্ল্যাটফর্মও বটে। এতে অংশগ্রহণ করেন জাদুশিল্পী শাহেন শাহ, বাসেদ মাহমুদ, একে আজাদ, বদিউজ্জামান, স্বপন দিনার, বিদেশ অধিকারী, সাদাত মামুন, সোহাগ খান, রাজ রানীসহ আরও অনেক বরেণ্য ও নবীন জাদুশিল্পী।

অনুষ্ঠানের জাদুশিল্পী ঐক্য কল্যাণ সংস্থা ও জাদুশিল্পী পরিষদের সভাপতি নন্দিত জাদুশিল্পী শাহীন শাহ্ বলেন,“জাদু শুধু বিনোদন নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। আমরা সবাই মিলে এর উন্নয়নে এগিয়ে যেতে চাই। তরুণদের মাঝে জাদু নিয়ে আগ্রহ তৈরি করতে হবে।”

বাসেদ মাহমুদ তার বক্তব্যে জাদুশিল্পীদের সংগঠিত হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “জাদু শিল্পের পেশাদারিত্ব ও সামাজিক স্বীকৃতি বাড়াতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পূর্ণমিলনী শুধু মিলনের উপলক্ষ নয়, এটি আমাদের অঙ্গীকারের মঞ্চ।”

একে আজাদ বললেন, “বাংলাদেশে অনেক প্রতিভাবান তরুণ আছে, যারা যথাযথ দিকনির্দেশনা পেলে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারবে।”

অন্যদিকে, জাদুশিল্পী স্বপন দিনার মনে করেন, “নতুন প্রজন্মকে শুধু কৌশল শেখালেই চলবে না, তাদের মধ্যে শিল্পবোধ, সততা এবং দায়িত্ববোধও গড়ে তুলতে হবে।”

অনুষ্ঠানে জাদু প্রদর্শনী ছাড়াও ছিল শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত মতবিনিময়, অভিজ্ঞতা বিনিময়, এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা। তরুণ জাদুশিল্পীরা তাদের মতামতে বলেন, তারা চান—দেশে একটি ‘ম্যাজিক স্কুল’ হোক, যেখানে নিয়মিত প্রশিক্ষণ, কর্মশালা এবং গবেষণার সুযোগ থাকবে।

সাদাত মামুন জানান, “অনেকেই এখনও মনে করেন জাদু শুধুই ভেলকি। কিন্তু এর পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম, পরিকল্পনা আর নানাবিধ সামাজিক বার্তা। এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে আমাদেরই কাজ করতে হবে।”

সোহাগ খান বলেন, “এই শিল্পকে ধরে রাখতে হলে এর সঙ্গে জড়িত মানুষদের জন্য নীতিগত সুরক্ষা, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং সম্মানজনক অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।”

পুরো আয়োজন জুড়ে ছিল উচ্ছ্বাস, ভাবনার গভীরতা এবং একটাই বার্তা—জাদু শিল্প কোনো একক মানুষের বিষয় নয়, বরং এটি একটি যৌথ প্রয়াস; একটি সাংস্কৃতিক আন্দোলন।
অতিথিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই জাদু শিল্প একদিন দেশের সাংস্কৃতিক গৌরবের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে উঠবে।

এই ঈদ পূর্ণমিলনী যেন হয়ে উঠেছিল এক ঐতিহাসিক মিলনমেলা—যেখানে শুধু আবেগ নয়, ছিল প্রত্যয়ের দীপ্তি। সবাই মিলে এক কণ্ঠে উচ্চারণ করলেন— “জাদু শিল্পের উন্নয়নে আমরা সবাই এক।”

রাজু

×