ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

"এক বস্তাও বীজ যাবে না!", দাম না বাড়ালে ধান সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা চুয়াডাঙ্গা কৃষকদের

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ১৫:৩৬, ২৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৫:৩৯, ২৬ জুন ২০২৫

ছবি: জনকণ্ঠ

বোরো ধান বীজের দাম কম হওয়ায় বীজ সরবরাহ বন্ধ করেছেন বিএডিসির চুয়াডাঙ্গার চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে বীজ সংগ্রহ কর্যক্রম। কৃষকদের ধান বীজ সরবরাহের শুরুতে কর্তৃপক্ষ দাম নির্ধারণ করেছে। এ মৌসুমে বীজ সংগ্রহ মুল্য নির্ধারণ কমিটি প্রত্যায়িত বোরো ধান বীজের দাম জাত ভেদে প্রতি কেজি ৪৮-৪৯ টাকা নির্ধারণ করায় কৃষকরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। তাদের প্রতি কেজিতে প্রায় ৫-৬ টাকা লোকসান গুণতে হবে। 

 

 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা বিএডিসি চলতি মৌসুমে বোরো ধান বীজ সংগ্রহ করবে ৭ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন। লোকসান থেকে বাঁচতে বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। বীজ সংগ্রহ সঠিক সময়ে সম্ভব না হলে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। অনেক এলাকায় বৃষ্টির পানি ও বন্যায় চাষের জমি প্লাবিত হচ্ছে। 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বীজ সরবরাহ না থাকায় বিএডিসি চুয়াডাঙ্গার ৩ টি অফিস এলাকায় শুনশান নিরবতা বিরাজ করছে। গত ১০ দিন বন্ধ রয়েছে বীজ সরবরাহ। তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে অফিসগুলো। এখানকার প্রায় শতাশিক শ্রমিক বেকার হয়েছে। কারণ বীজ দিচ্ছে না কৃষকরা। 

 

 

 

কৃষকদের দাবি, বীজের দাম বৃদ্ধি হলেই লোকসান কমানো সম্ভব। কর্তৃপক্ষ বলেছেন, চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা বিষয়টি লিখিত ভাবে জানালে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো। আর বীজ সরবরাহ কর্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কৃষকদের সাথে আলোচনা চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের আওতায় জেলায় কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স, অধিক বীজ ও বীজের আপদকালীন মজুদ কর্মসূচি অফিস চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের মাধ্যমে ধান বীজ সংগ্রহ করে। দাম নির্ধারণের শুরুতে প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষকদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে। কিছুদিন ধান বীজ সরবরাহ করেছে চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা। বীজের মূল্য জানার পর কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ করেছেন। বীজ সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ কমিটি ১৯ জুন প্রতি কেজি বোরো জাতের ধান বীজের দাম নির্ধারণ করেছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা। চলতি মৌসুমে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়াস ৩ হাজার ৬০৫ মেট্রিক টন, অধিক বীজ ২ হাজার ৪৯৫ মেট্রিক টন ও বীজের আপদকালিন মজুদ ১ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন বোরো ধান বীজ সংগ্রহ করার প্রোগ্রাম দিয়েছে চুক্তিবদ্ধ কৃষকদের।                

কৃষকরা জানান,আমরা বিএডিসির নির্ধারিত জাতের বেশ কয়েকটি ধান চাষ করি জমিতে। সেই ধান থেকে বীজ তৈরির পর বিএডিসিতে সরবরাহ করি। ১ মণ ধান বীজে রূপান্তর করতে গিয়ে আদ্রতা, প্রসেসিং ওয়েষ্ট ও ধুলা-চিটা বাদ দিয়ে ৩২ কেজি হয়।  প্রতি কেজি বীজ ধান প্রস্তুতে খরচ হয় ২ টাকার বেশি। কৃষকদের এক কেজি ধান বীজ উৎপাদন করতে খরচ হয় ৫৩ টাকা। ৪৮ থেকে ৪৯ টাকায় ধান বীজ সরবরাহ করলে কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠবেনা। লোকসানের মুখে পড়তে হবে। অন্য কৃষকরা বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি করছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। ন্যায্য মূল্য না পাওয়া পর্যন্ত কৃষকরা বীজ সরবরাহ বন্ধ রাখবে বলেও তারা জানান।

বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ কৃষকরা জানান, বছরের পর বছর আমাদের লোকসান গুণতে হচ্ছে। কারণ বিএডিসি ধান বীজের দাম স্বাভাবিকভাবে নির্ধারণ না করায় এ জটিলতা তৈরি হচ্ছে। দাম নির্ধারিত হয়েছে ৪৮ থেকে ৪৯ টাকা প্রতি কেজি। ১ কেজি ধান তৈরি করতে ৫৩ টাকা মত খরচ হয়। বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এক বস্তাও বীজ ধান যাবে না। ব্যাংক লোন নিয়ে ধান চাষ সহ অন্য খরচ মিটাতে হয়। তারা বলেন,কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে।

শ্রমিকরা জানান,বোরো ধান বীজের ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ না হওয়ায় কৃষকরা ধান বীজ সরবরাহ বন্ধ রেখেছেন। কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স, অধিক বীজ ও বীজের আপদকালীন মজুদ কর্মসূচি অফিসে বীজ না আসায় কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। কর্মব্যস্ততা  না থাকায় অলস সময় পার করছেন শ্রমিকরা। হুমকির মুখে পড়েতে পারে বোরো ধান বীজ সংগ্রহ।

তারা আরো জানান, তিনটি অফিসে আমরা শতাধিকের বেশি শ্রমিক কাজ করি। কাজ বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অসহায় অবস্থায় রয়েছি। সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বীজ ধান না আসা পর্যন্ত আমাদের কোন কাজ শুরু হবে না। তাই আমরা সমস্যার দ্রুত সমাধান চায়।

 

 

চুয়াডাঙ্গা বীজ প্রক্রিয়াজতকরণ কেন্দ্রর যুগ্ন পরিচালক এ এফ এম শফিকুল ইসলাম জানান, বীজ সরবরাহ স্বাভাবিক ছিল তিনটি অফিসে। বিএডিসি দাম নির্ধারণ করার পর থেকে কৃষকরা ধান সরবরাহ করা বন্ধ রেখে বলে শুনেছি। আমাদের কোন হাত নেই এখানে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানাবো। পরিস্থিতি দ্রুত সময়ে স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি।

ছামিয়া

×