ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৬ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

শিক্ষার্থী পারাপারসহ বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে সমস্যা পোহাচ্ছেন কৃষকরা

নালিতাবাড়ীতে ব্রিজ ভেঙে দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, নালিতাবাড়ী, শেরপুর

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ২৫ জুন ২০২৫

নালিতাবাড়ীতে ব্রিজ ভেঙে দুর্ভোগে ১০ গ্রামের মানুষ

মিনি স্টিল ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় দুর্ভোগে দুইপাড়ের মানুষ

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকায় প্রবাহিত খরস্রোতা চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি-পলাশীকুড়া ঘাটের ওপর নির্মিত মিনি স্টিল ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন কমপক্ষে ১০ গ্রামের হাজারো মানুষ। এতে শিক্ষার্থী পারাপারসহ বাজারে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে সমস্যা পোহাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা। ওই ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে দুই পাড়ের মানুষ ৫/৬ কিলোমিটার ঘুরে চলাফেরা করছেন। এখানে নেই কোন বাঁশের সাকো। তাই দুর্ভোগ লাঘবে ভুক্তভোগীরা কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণ করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, এলাকার মানুষের নদী পারাপারের কথা বিবেচনা করে কয়েক বছর আগে উপজেলার চেল্লাখালী নদীর পলাশীকুড়া ও বাতকুচি এলাকায় এলজিএসপির অর্থায়নে একটি মিনি স্টিল ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছিল। ব্রিজটি বিগত ২০২২ সালে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতের তোড়ে ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ওই স্থানে একটি বাঁশের সাকো নির্মাণ করা হয়। ওই সাকোটিও এবারের পাহাড়ি ঢলে ভেঙে গেছে। ফলে নদী পারাপারে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দুই পাড়ের হাজারো মানুষ।
স্থানীয় বাতকুচি গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষিকা সুমী আক্তার জানান, এই নদীর পলাশীকুড়া-বাতকুচি ঘাট দিয়ে পার হয়ে শত শত শিক্ষার্থীরা পলাশীকুড়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়, পলাশীকুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেগম রৌশন আরা একাডেমি, হোসেন আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও প্রাপ্তী একাডেমিতে যায়। বর্ষা মৌসুমে  ব্রিজ না থাকায় নদী পারাপারে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। 
ওই এলাকার বাসিন্দা আসাদুজ্জামান, আজিজুল হক, বিল্লাল হোসেন ও আব্দুল বারেক জানান, বাতকুচি গ্রামটি পাহাড়ঘেঁষা হওয়ায় এই গ্রামে মাঝে মধ্যেই বন্যহাতি তা-ব চালায়। তখন জানমাল বাঁচাতে গ্রামের মানুষ নদী পার হয়ে পাশের গ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। ুকিন্তু ব্রিজ না থাকাতে গ্রামের বাসিন্দাদের পারাপারে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ৫/৬ কিলোমিটার ঘুরে বাজারে নিয়ে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের। তাছাড়া এই এলাকা দিয়ে নদী পার হয়ে জেলার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র মধুটিলা ইকোপার্ক, পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, বাতকুচি, মেষকুড়া, সমশ্চুড়া, বারমারী বাজার, পলাশীকুড়া, আন্ধারুপাড়া, ডালুকোনা, শেকেরকুড়া ও বোনারপাড়া গ্রামের হাজারো মানুষ যাতায়াত করেন। 
এদিকে, গত তিন বছর ধরে ব্রিজটি ভেঙে পড়ায় হাজারো পথচারী এখন বিপদে পড়েছেন। বিশেষ করে শিক্ষার্থী, কৃষক, শিশু ও নারী এবং বৃদ্ধ রোগীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি পাশ্ববর্তী বারমারী বাজারে নিত্যপণ্য ক্রয় করতে আসতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। তাই দ্রুত এখানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সংশ্লিষ্ট পোড়াগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা জামাল উদ্দিন বলেন, মানুষের ভোগান্তি কমাতে গত বছরের প্রথম দিকে পরিবেশ ও মৃত্তিকা অধিদপ্তরের একটি টিম এসে ওই নদী এলাকা পর্যাবেক্ষণ করে গেছেন। এলজিইডির প্রকৌশলীরা এসে মাপঝোক করেছেন। তারা এখানে দ্রুত নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণের কথা বললেও দীর্ঘদিন হয়ে গেল কোনো কাজ হচ্ছে না। তিনি দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। 
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ীর এলজিইডির উপজেলা কার্যালয়ের প্রোকৗশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়াল বলেন, চেল্লাখালী নদীর ওই স্থানে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া এলজিইডির পক্ষ থেকে ওই স্থান পরিদর্শন ও প্রাথমিক জরিপ চালানো হয়েছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলেই দ্রুত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

×