
বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে আম
উত্তরাঞ্চলজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। মে মাসে বৃষ্টির দেখা পাওয়া গেলেও জুনে এসে আবহাওয়া পুরো পাল্টে গেছে। এতে প্রচ- তাপপ্রবাহে গাছে থাকা হাঁড়িভাঙা আম ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফলে আম পাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই হাঁড়িভাঙা আম বাজারজাতকরণে বাধ্য হচ্ছেন বাগান মালিকগণ। আমচাষীরা বলছেন বৃষ্টির খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি না হলে গাছে আম ধরে রাখা যাবে না।
হাঁড়িভাঙা আম দেশের অন্যতম সেরা আমের খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে সুস্বাদু এ আম। জিআই পণ্য আঁশমুক্ত ও সুস্বাদু হওয়ায় এ আমের চাহিদা এখন সারাদেশে। জনপ্রিয়তার কারণে রংপুরের মিঠাপুকুর, বদরগঞ্জ ও রংপুর সদর পেরিয়ে এখন রংপুরের তারাগঞ্জ, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর, জেলা সদর, কিশোরীগঞ্জ, দিনাজপুরের পার্বতীপুর, খানসামা, চিরিরবন্দরসহ বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে হাঁড়িভাঙা আমের বাগান, ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এসব বাগান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হাঁড়িভাঙা আম আবাদ করা জমির পরিমাণ ১ হাজার ৯১৫ হেক্টর। সম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৮৫১ মেট্রিক টন। আগের বছরগুলোতে ২০ জুনের মধ্যে হাঁড়িভাঙা আম বাজারে আনার তারিখ দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর গাছে আমের মুকুল আসে ফেব্রুয়ারি মাসে। ফলে পরিপক্ব আম পাড়ার সময় ধরা হয় জুনের শেষ এবং জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে।
চাষীরা বলছেন, এমনিতে বছরের শুরুতে নানা কারণে আমের মুকুল দেরিতে এসেছে। তার পর তীব্র গরমে আম ঝরে পড়ছে। ‘খরা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় আম কিছুটা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে খরার শুরু থেকে যারা বাগানের যতœ নিয়েছেন; বিশেষ করে নিয়মিত সেচ ও ¯েপ্র করেছেন তাদের গাছের আম ঠিকঠাক আছে।’
মৌসুমের শুরুর দিকে ঘন কুয়াশা ও হালকা বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় আম। বিশেষ করে বড় গাছগুলোতে বেশি আম ঝরছে। এ পরিস্থিতিতে আম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষী ও বাগান মালিকরা। চাষিরা বলছেন ‘প্রথমে আমের বোঁটার রস শুকিয়ে যাচ্ছে; পরে হলুদ আকার হয়ে ঝরে পড়ছে। বাগান মালিক আজিজুল ইসলাম জানান, এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিগত দিনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সেই স্বপ্ন ভেঙে যাচ্ছে প্রচ- তাপপ্রবাহে।
হাঁড়িভাঙার মৌসুমে আমের সবচেয়ে বড় হাট রংপুরের পদাগঞ্জ। শুক্রবার থেকে এখানে ক্রেতাদের সরব উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠেছে আমের বেচাকেনা। এখান থেকে ট্রাকে ট্রাকে আম লোড করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে বাগান মালিক বলছেন, অতিরিক্ত গরমের কারণে এবার আগেভাগেই আম পাড়া শুরু হয়েছে। শুধু পদাগঞ্জ হাটেই নয়, হাঁড়িভাঙা আমের প্রধান উৎপাদন এলাকা খোঁড়াগাছ, পাইকারহাট, ময়েনপুর, চ্যাংমারী, বালুয়া মাসুমপুর, কুতুবপুর, গোপালপুর, লোহানীপাড়া, রামনাথপুর, কালুপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন দৃশ্য দেখা গেছে।এসব এলাকায় আম বিক্রি করার ধুম চলছে। হাটে-বাজারে মানুষের সমাগমে যে কারো মনে হতে পারে এসব এলাকা যেন হাঁড়িভাঙা আমের রাজ্য।
অপর আরেক সূত্র বলছে বদরগঞ্জ এলাকার হাঁড়িভাঙা আম এক সপ্তাহ আগেই বাজারে নেমেছে। সেখানকার বাগানগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকমতো পরিচর্যা না করায় বেশ করে আম গাছ থেকে ছিঁড়ে পড়ার কারণে বদরগঞ্জ এলাকার আম আগেই বাজারে ছেয়ে গেছে।