
মায়ের কোলেই শিশুদের নিরাপত্তার ঘুম—তবে এই ঘুম যে মায়ের কোলেই শেষ ঘুম, তা জানতো না অবুঝ শিশু দুটি। এক হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হলো বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার গারুরিয়া ইউনিয়নের হিরাদার নামের ছোট্ট গ্রামটি।
হিরাদার গ্রামে দুই শিশু সন্তানকে ঘরে ঘুমিয়ে রেখে প্রেমিকের হাত ধরে দুই বছর আগে নিরুদ্দেশ হন মা আছমা বেগম। স্নেহময়ী মা প্রেমিকের হাত ধরে চলে যাওয়ার পর অবুঝ শিশু দুটি জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। মাকে হারানোর শোক কাটতে না কাটতেই কিছুদিন পরেই তাদের বাবা নাসির হাওলাদার বাড়ির পাশের মাঠে শাপলা তুলতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেন।
যে বয়সে বাবা-মার স্নেহ-আদর পেয়ে বেড়ে উঠার কথা, সেই বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়েছে শিশু দুটি—১০ বছর বয়সী মেহেদী ইসলাম ও ৮ বছর বয়সী মায়নুল ইসলাম। এখনো প্রতিদিন বাবার কবরের সামনে এসে হাউমাউ করে কাঁদে তারা। এই দৃশ্য যেন দেখার মতো নয়!
এই শিশু দুটির শেষ আশ্রয়স্থল এখন তাদের বৃদ্ধ দাদি রিজিয়া বেগম। মা-বাবা হারানো এতিম দুই শিশুকে তিনি বুকে আগলে রেখেছেন। কিন্তু তিনিও বৃদ্ধ এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ। ফলে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের সংসারে। দুই মুঠো ভাতের জন্য অসহায় রিজিয়া বেগম এখন অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করছেন।
তাদের নিজস্ব কোনো সম্পত্তি নেই। একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরই এখন তাদের মাথা গোঁজার একমাত্র আশ্রয়।
প্রতিবেশীরা মাঝে মাঝে সাহায্যের হাত বাড়ালেও, তা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। স্কুলে ভর্তি থাকলেও নিয়মিত যাওয়া সম্ভব হয় না শিশুদের। অনাহারে দিন কাটানোর কারণে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তারা।
ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ঘুটঘুটে অন্ধকারে তাদের জীবন যেন হারিয়ে যাচ্ছে।
দুই এতিম শিশুর জীবনমান উন্নয়নে সরকারি সহায়তা চেয়েছেন ভিক্ষুক রিজিয়া বেগম।
সানজানা