
ছবি: জনকণ্ঠ
শেরপুর জেলার অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা ইকোপার্কে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দর্শনার্থীদের ভিড় বেড়েছে। দীর্ঘ ঈদের ছুটিতে সবুজ প্রকৃতি আর উঁচুনিচু পাহাড়ি টিলার মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন ভ্রমণপিপাসুরা।
ঈদের চতুর্থ দিন মঙ্গলবার (১০ জুন) সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, এবারের ঈদে বেশ কয়েক দিন টানা ছুটি পেয়েছেন কর্মজীবী মানুষ। তারা প্রকৃতির সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে ছুটে এসেছেন সবুজ চাদরে ঢাকা নিরিবিলি মধুটিলা ইকোপার্কে—যেখানে দেশের জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’র শুটিং করা হয়েছিল। যারা দীর্ঘদিন শহরের ইট, পাথর আর কংক্রিটে আবদ্ধ ছিলেন, ছুটি পেয়ে তারা প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে আনন্দিত ও উল্লসিত হচ্ছেন। তবে অতিরিক্ত ভ্যাপসা গরম ঈদের আনন্দে কিছুটা বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।
মধুটিলা ইকোপার্কে রয়েছে সারি সারি সবুজ গাছ, মনোরম স্টার ব্রিজ, পাহাড়ি টিলায় সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার, বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য, বন বিভাগের সৃজিত মিশ্র বন এবং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা সবুজ বৃক্ষের সমারোহ। উচ্চ টাওয়ারে উঠে পর্যটকরা পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের মেঘালয় রাজ্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এছাড়া, ২০০ ধাপবিশিষ্ট উঁচু সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়চূড়ায় উঠে চারপাশের সবুজে মোড়ানো দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন তারা। রয়েছে মনোরম পাহাড়ি লেক, যেখানে প্যাডেল বোট চালিয়ে ভিন্নরকম আনন্দ উপভোগ করেন দর্শনার্থীরা।
দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের জন্য রয়েছে পাহাড়ি পরিবেশে স্থাপিত মহুয়া রেস্ট হাউস। বন বিভাগের মাধ্যমে ৮ হাজার টাকা (ভ্যাট ছাড়া) অগ্রিম বুকিং দিয়ে শুধুমাত্র দিনের বেলায় এটি ব্যবহার করা যায়।
এছাড়া মধুটিলা ইকোপার্কের আশপাশে বন বিভাগ দীর্ঘমেয়াদি মিশ্র বাগান সৃজন করায় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে। এসব বনে বন্য হাতির বিচরণও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকৃতি যেন সেজে উঠেছে পর্যটকদের বরণ করে নিতে। দর্শনার্থীরা এখানে এসে শহুরে একঘেয়েমি ভুলে নতুন উদ্দীপনায় বাড়ি ফিরছেন।
শ্রীবরদী উপজেলার পর্যটক সাবিজুল ইসলাম বলেন, “এই পার্কের পাহাড়ি বন আর গাছপালা দেখে বেশ ভালো লাগছে। তবে প্রচণ্ড গরম থাকায় ঘুরে বেড়াতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “এখানে যদি ঝুলন্ত ব্রিজ এবং নতুন নতুন রাইড যুক্ত করা হয়, তাহলে পর্যটকের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে।”
পার্কের ইজারাদার মো. মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “মধুটিলা ইকোপার্ক কৃত্রিম নয়, প্রকৃতির নিয়মেই গড়ে উঠেছে। এখানে এসে দর্শনার্থীরা প্রকৃতির নিখাঁদ ভালোবাসা উপভোগ করতে পারেন।” তিনি জানান, সরকারিভাবে প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা, তবে বর্তমানে অর্ধেক মূল্যে প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী বলেন, “তাপমাত্রা কিছুটা সমস্যা করছে বটে, তবে ঈদের দীর্ঘ ছুটির কারণে ভিড় লেগেই আছে। নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইজারাদার ও বন বিভাগের কর্মীরা যৌথভাবে নিরাপত্তা টহল দিচ্ছেন। এখানে কোনো নিরাপত্তা ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, ‘এই পার্কটি এখন একদম কোলাহলমুক্ত ও নিরিবিলি। এখানে ভ্রমণে এলে প্রকৃতির ভালোবাসায় সিক্ত হবেন দর্শনার্থীরা।’
শহীদ