
কুড়িগ্রামে অধিকাংশ চরের মানুষ কোরবানি ছাড়াই পালন করছে ঈদ। এসব চরের নিম্ন আয়ের মানুষের সামর্থ নেই পশু কোরবানি দেয়ার। ফলে হাজারো শিশু বঞ্চিত হচ্ছে ঈদ আনন্দ থেকে। অনেক বাবা-মা নতুন কাপড় কিনে দিতে না পারায় এসব শিশুর কাছে ঈদ যেন আর কয়েকটা সাধারণ দিনের মতোই। চরের মানুষ কাজের সন্ধানে চলে যায় দেশের বিভিন্ন জেলায়। এদের অধিকাংশই শ্রমজীবি এবং গার্মেন্টস কর্মী। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন সংগঠন তাদের দাবীতে দিনের পর দিন আন্দোলন করে যাচ্ছে।
এ সময় ঢাকার রাস্তায় ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ হয়ে থাকে। শ্রমজীবি মানুষদেও রিকসা অটো চলাচল বন্ধ রাখতে হয় তাদের। আয় প্রায় বন্ধ থাকে শ্রমজীবি মানুষদের। এমনিতেই তাদের স্বাভাবিক আয় হয় না। সংসার চালাতেই তারা বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ কোরবানী দিলেও এবার তার সম্ভব হয়ে উঠেনি । ঈদের দিনি বাড়িতে থাকলেও এবার কোরবানী না দিয়ে অলস সময় কাটচ্ছে। সেই সাথে আছে অনেক চর ও দ্বীপচরে আছে নদী ভাঙ্গন।
১৬টি নদ-নদী নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম জেলা। এ জেলায় রয়েছে প্রায় ৪শ ৫টি চর ও দ্বীপচর। এখানে প্রায় ৬ থেকে ৭লক্ষ মানুষ বাস করে। দারিদ্র পীড়িত এসব চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সামর্থ না থাকায় অন্যের উপর ভর করে কিংবা হাঁস-মুরগী দিয়েই চলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি।
সদর উপজেলার হোলখানা ইউনিয়নের ধরলা পারের সারডোব ও সন্যাসী চরের প্রায় ৫শতাধিক মানুষ কেউ কোরবানী দিবে না। সাম্প্রতিক সময়ে আগাম বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলের কারণে তাদের ধান ও ভুট্টা সব পানির নীচে তলিয়ে গেছে। আবাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল সেই কষ্ট এখনও ভুলতে পারেনি । তারা চিন্তাও করতে পারছে না কোরবানী দেয়ার কথা। এই দুটি চরের কোন মানুষ কোরবাণী দিতে পারেনি বলে জানায় এলাকার বয়োজেষ্ঠ্যরা। এই এলাকার কোন পরিবারে জোটেনি ঈদের কোরবাণীর মাংস।
সন্যাসী চরের তসলিম উদ্দিন, আশরাফ মিয়া, ইলিয়াস হোসেন,কুলসুম বিবি জানান আমরা দিন মজুরী করে সংসার চালাই। যে বছর আবাদ ভাল হয় তখন কয়েকজন মিলে গরু অথবা ছাগল কোরবানি দিতাম। কিনতু এবারের আগাম বৃষ্টিতে আমাদের ফসল নষ্ট হওয়ায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমাদেও সংসার চালানোর মত টাকা নেই । কোরবানির কথা চিন্তাও করতে পারি না। মুরগী ও হাস দিয়ে সন্তানদের একটু মাংস খাওয়ানোর ব্যবস্থা করবো।
হোলখানা ইউনিয়নের মেম্বার গোলজার হোসেন মন্ডল জানান চরের মানুষ এমনিতেই গরীব। তার উপর সাম্প্রতিক দুর্যোগে তাদের খুব ধান ও ভুট্টার বাদামের ক্ষতি হয়েছে। এটি কাটিয়ে উঠতেই কয়েক মাস লেগে যাবে। তাদের পক্ষে কোরবানি অসম্ভব হয়ে উঠেছে এবার।
আঁখি