
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পুটিজানা ইউনিয়নের বৈলাজান গ্রামে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় একটি বিরল ও অনন্য ঐতিহ্য চোখে পড়ে। বাপ-দাদাদের প্রায় ৩০০ বছর পুরনো ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে এখানে দেড় হাজার পরিবার। তারা একসঙ্গে কোরবানিতে অংশ নিয়ে গ্রামের ভাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের এক মধুর উদাহরণ স্থাপন করেছে।
এ বছরও একই উৎসাহ-উদ্দীপনায় কোরবানির মাঠ জমে উঠেছে আনন্দ ও উল্লাসে। বৈলাজান গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কোরবানির মাঠে ৭৭টি গরু এবং ১৫৩টি খাসি একযোগে কোরবানি করা হয়েছে। মাংস বন্টনের মাধ্যমে গ্রামের দেড় হাজার খানার মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বৈলাজান কোরবানির মাঠটি দুটি ঈদগাহ ও সাতটি মসজিদ এলাকা নিয়ে গঠিত একটি বৃহৎ সমাজ। সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় পশু জবাই ও মাংস তৈরির কাজ, যা সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। মাঠজুড়ে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
প্রতিটি কোরবানির পশু থেকে তিন ভাগ মাংস হয়। তার একভাগ জমা রাখা হয় ‘পঞ্চায়েত’-এ, যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ্ছাসেবীরা সমানভাবে মাংস বন্টন করেন। গ্রামে প্রতিটি পরিবার ঘরে ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কোরবানী কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন মাস্টার বলেন,
“এ কোরবানির ঐতিহ্য আমাদের ভাতৃত্বের বন্ধনকে আরও মজবুত করেছে। এটা গ্রামের পরিচয়। আমরা সবাই মিলেমিশে আনন্দ করি। আশা করি এই ঐতিহ্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও ধরে রাখবে।”
কোরবানী কমিটির সভাপতি মো. ইব্রাহিম খলিল মাস্টার বলেন,
“আমাদের পিতামহদের থেকেই এই ঐতিহ্য আমাদের কাছে এসেছে। আনুমানিক ৩০০ বছর ধরে এই মাঠে কোরবানি হয়ে আসছে। আমার দাদা, বাবা ও আমরাও এই ঐতিহ্য পালন করছি।”
ঈদের আনন্দে মেতে থাকা এই গ্রামের মানুষদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চমৎকার এই চিত্র সামাজিক বন্ধন ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে রয়েছে।
মিমিয়া