ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের দিনে বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানিতে ভোগান্তি

মো. আতিকুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ১১:১৭, ৭ জুন ২০২৫

ঈদের দিনে বৃষ্টিতে দক্ষিণাঞ্চলে কোরবানিতে ভোগান্তি

ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আবহাওয়ার ভিন্নতা কোরবানির কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। রাজধানী ঢাকা, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও কুষ্টিয়ায় আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে অনুকূলে থাকায় কোরবানি নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল ও নোয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাতের কারণে কোরবানি দিতে গিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অনেকেই ভোগান্তির শিকার হন।

ঈদের দিন সকালে আবহাওয়া মূলত মেঘলা ছিল। যদিও ঢাকাসহ কিছু এলাকায় বৃষ্টিপাত হয়নি, তবে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক অঞ্চলে সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রক্রিয়াকরণে বাধা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে খোলা জায়গায় কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হন অনেকেই। অনেক জায়গায় আগে থেকেই ছাউনি বা ত্রিপলের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টিতে ভিজেই কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে।

ভোলার বাসিন্দা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, “সকাল থেকে আবহাওয়া ভালো ছিলো, কিন্তু গরু জবাই করার পর মাংস কাটার সময় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়। চারদিকে কাদা-পানি জমে যায়। বাধ্য হয়ে পাশের একটি স্কুলের নিচে আশ্রয় নিয়ে কাজ চালিয়ে নিয়েছি। অনেকেই ত্রিপল দিয়ে অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করেন।”

পটুয়াখালী, বরিশাল এবং নোয়াখালীর কিছু গ্রামীণ এলাকাতেও একই চিত্র দেখা গেছে। অনেক পরিবার কোরবানির পশু জবাইয়ের পরে দ্রুত ত্রিপল টানিয়ে বা পলিথিনের অস্থায়ী ছাউনি তৈরি করে কোরবানির কাজ শেষ করার চেষ্টা করেছেন।

বৃষ্টির কারণে কোরবানির প্রক্রিয়া অনেক জায়গায় বিলম্বিত হয়। পশুর রক্ত ও বর্জ্য অপসারণে সমস্যা দেখা দেয়, যা জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি এবং পরিবেশ দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেক এলাকায় নালার মুখ বন্ধ হয়ে কোরবানির বর্জ্যে পানি জমে যায়, যা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে ওঠবে।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর ঈদের আগের দিন (৬ জুন) এক পূর্বাভাসে জানায়, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একইসঙ্গে বলা হয়, সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, ফলে আবহাওয়া কিছুটা গরম থাকতে পারে। তবে কোথাও কোথাও হালকা বৃষ্টিতে সাময়িক স্বস্তি মিলতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে এটি দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আগামীকাল (৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যত্র আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

এ বছর ঈদের দিনের অভিজ্ঞতা অনেককে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেছে। অনেকেই মনে করছেন, বৃষ্টিপ্রবণ মৌসুমে ঈদুল আজহার সময় কোরবানির জন্য ছাউনিযুক্ত নিরাপদ স্থান প্রস্তুত রাখা অত্যন্ত জরুরি। স্থানীয় সরকার ও সিটি কর্পোরেশন যদি নির্দিষ্ট ও ছাউনিযুক্ত কোরবানি এলাকা নির্ধারণ করে দেয়, তবে মানুষের দুর্ভোগ কমবে এবং একইসঙ্গে পরিবেশ দূষণও অনেকাংশে হ্রাস পাবে।    

আসিফ

×