ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ঈদের আগেই অন্যরকম কোরবানি, গরু বিক্রি করেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো পরিবারটি

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ৬ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৯:১৫, ৬ জুন ২০২৫

ঈদের আগেই অন্যরকম কোরবানি, গরু বিক্রি করেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো পরিবারটি

ছবি: সংগৃহীত

গরুর হাট মানেই দাম দর, হাঁকডাক আর চাহিদা অনুযায়ী কেনাবেচা। কিন্তু তার মাঝেও কখনো কখনো আবেগ ছাপিয়ে ওঠে সব হিসেব। রাজধানীর গাবতলী গরুর হাটে দেখা গেল তেমনই এক চিত্র, একটি গরুকে ঘিরে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবার।

 


শেরপুর থেকে এনে গাবতলী হাটে তোলা হয়েছিল ‘লায়ন’ নামের একটি গরু। নাজমুল হোসাইন ও তার পরিবার নিজের হাতে ভালোবেসে বড় করেছেন গরুটি। তবে কোরবানির উদ্দেশ্যে বিক্রি করতে হলেও শেষ মুহূর্তে গরুটিকে অন্যের হাতে তুলে দিতে গিয়ে চোখের পানি আটকে রাখতে পারেননি কেউই।


নাজমুল হোসাইন বলেন,
“লায়নকে আমি মামা ডাকতাম, সে আমার ডাকে সাড়া দিত। রাতে ব্যবসা থেকে ফিরেই আমি ওর কাছে যেতাম, ও আমাকে চুমু দিত, আদর করত। সন্তানদের সময় না দিলেও ওর সময় দিতাম বেশি।”

তিনি আরও জানান, তাদের পরিবারের এক সদস্য মানসিক রোগী। তার ছেলে একটি প্রাইভেট চাকরির উপর নির্ভরশীল। সেই ঘরে এই গরুটি ছিল কোরবানির একমাত্র আশা। দীর্ঘ আশা-ভরসার প্রতীক হয়ে ওঠা লায়নের দাম পাওয়া গেলেও মনের কষ্ট ভুলতে পারেননি তারা।
“আমার কুরবানি হতো, কিন্তু আমি ওর রক্ত দেখতে পারবো না।"

গরুটির বিক্রির সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন পরিবারের সবাই। পাশে থাকা অন্যান্য ক্রেতা ও দর্শনার্থীরাও চোখের জল ফেলেন এই দৃশ্য দেখে।

 

 


ক্রেতার কাছে দড়ি তুলে দেওয়ার সময় নাজমুল বলেন,
“ওর রক্ত আমি চোখে দেখতে পারবো না। তবে আশা করি, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোরবানি হচ্ছে, এই গরুটি জান্নাতের পথে আমার পরিবারের জন্য সুপারিশ করবে।”

 


মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর থেকে আসা ইলিয়াস হোসেন নিয়ে এসেছেন তাদের প্রিয় গরুটি। হাটে বসে গরুটির পাশে কাঁদতে দেখা যায় তাকে। কারণ জানতে চাইলে আরও কান্নায় ভেঙে পড়েন।
“এই গরুটি আমার মায়ের খুব আদরের। মা যতটা ভালোবাসে আমাকে, তার চেয়েও বেশি আবেগ হয়ে যায় এই গরুটিকে নিয়ে। এই গরুকে অন্যের হাতে তুলে দিতে গিয়ে থামাতে পারিনি কান্না।”


এই গল্পগুলো কেবল একেকটি পশু বিক্রির ঘটনা নয়। এগুলো ভালোবাসা, আত্মত্যাগ, এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সব ছেড়ে দেওয়ার মনের শক্তির প্রতিচ্ছবি। কেউ বাজার থেকে কোরবানির পশু কেনেন, কেউ আবার নিজের হাতেই আদর করে বড় করা প্রাণীকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করেন।

আমরা প্রায়শই দেখি শুধু যিনি পশু কিনে কোরবানি করেন, তাকেই আত্মত্যাগের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন ভালোবেসে লালন করা প্রাণীকে অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় জানান, তাদের আত্মত্যাগও অনস্বীকার্য।
 

আঁখি

×