ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অবৈধভাবে বোট নির্মাণ চলছে ঝাউবনে

কুতুবদিয়ায় ঝাউবন নিধন, সাগরে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার:

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১ জুন ২০২৫

কুতুবদিয়ায় ঝাউবন নিধন, সাগরে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য

কুতুবদিয়া সমুদ্র সৈকতের উপকূলে ঝাউগাছ নিধন চলছে অবাধে। কুতুবদিয়ার বাইরে থেকে মাদার ট্রি এনে ডগ তৈরি করে নির্মাণ করা হচ্ছে বোট। ঝাউবনের ভেতর গড়ে উঠেছে অবৈধ ঘরবাড়ি ও ঝুপড়ি দোকান। তৈরি হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত বোট ও বড় আকারের নৌকা। এছাড়া গড়ে উঠছে অবৈধ বসতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা, আর সাগরে ফেলা হচ্ছে বর্জ্য। এতে সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেমন হারাচ্ছে, তেমনি ঝুঁকির মুখে পড়ছে কুতুবদিয়ার উপকূল।

সূত্র জানায়, কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিলের মাঝিরপাড়া একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা। জেলেদের চলাচল, মাছ অবতরণসহ নানা কারণে এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সেই সুযোগে সৈকত রক্ষায় লাগানো ঝাউগাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে অস্থায়ী বসতি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে শতাধিক স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে চায়ের দোকান, মুদির দোকান, ফিশিং আড়ত ও বসতঘর। অনেকেই মাছ ব্যবসায়ী সমিতির নামে ঘর স্থাপন করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঝাউবনের ভেতর ও সড়কের পাশে স্তূপ করে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের এলাকায়।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দেলোয়ার হোসেন, মনছুর আলম, খোরশেদ আলম, রুহুল কাদেরসহ কয়েকজন ব্যক্তি একটি সিন্ডিকেট গঠন করে কুতুবদিয়ার বাইরে থেকে মাদার ট্রি এনে নৌকা নির্মাণ করছেন। ঝাউবন দখলের লক্ষ্যে টার্গেটকৃত স্থানে ময়লা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। পাশাপাশি সাগর থেকে মাছ আনতে ঝাউবন কেটে তৈরি করা হয়েছে রাস্তা, যেখানে দিনরাত চলছে গাড়ি চলাচল।

কৈয়ারবিল থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটারজুড়ে সি-বিচ এলাকায় দেখা গেছে, ঝাউবনের ভেতরে নির্মাণ করা হচ্ছে ছোট ছোট ঘর। সুযোগ পেলে কেটে ফেলা হচ্ছে ঝাউগাছ। বড় ঝাউগাছগুলো রাতের আঁধারে নিধন করা হচ্ছে। এতে সৈকতের প্রাকৃতিক পরিবেশ যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি পর্যটনের ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব।

এর আগেও একই সিন্ডিকেট এই ঝাউবন কেটেছিল। বর্তমানে কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ ও দক্ষিণ ধুরুং এলাকাসহ আরও কয়েকটি চক্র দখল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

বাপা (বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন) কক্সবাজার জেলা সভাপতি বলেন, “সরকার পরিবর্তনের সুযোগে আগের দস্যুতার ধারা অব্যাহত রেখেছে দখলদাররা। কেউ ঝাউগাছ কেটে ঝুপড়ি ঘর করছে, কেউ দোকান ও নৌকা নির্মাণে ব্যস্ত। আবার সরকারি খাসজমিও দখল করছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবেশ একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। অতিদ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।”

কুতুবদিয়া থানার ওসি আরমান হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমাদের জানা আছে। তবে এটি বন বিভাগের আওতাভুক্ত এলাকা। তারা সহযোগিতা চাইলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।”

বন বিভাগের কুতুবদিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে বন আইনে মামলা করা হবে।”

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, “যে স্থানে ঝাউগাছ কাটা হচ্ছে, সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

নুসরাত

×