ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যশোর জেনারেল হাসপাতাল

এইডস আক্রান্ত নারীর সিজার করা নিয়ে চিকিৎসকদের মতভেদ   

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৩০ মে ২০২৫

এইডস আক্রান্ত নারীর সিজার করা নিয়ে চিকিৎসকদের মতভেদ   

.

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এইডসে আক্রান্ত এক গর্ভবতী নারীর সিজারিয়ান অপারেশন নিয়ে দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। 
একদিকে, গর্ভবতী ওই নারীর চিকিৎসাপ্রাপ্তির মানবিক চাহিদা; অন্যদিকে বিভিন্ন রোগীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটারে সংক্রমণ ঝুঁকি এবং সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক-নার্সদের সেফটি সিকিউরিটি। এই দুই বিষয় নিয়ে হাসপাতালে ওই রোগীর ‘ইলেকটিভ সিজার’ বা ঐচ্ছিক সিজারিয়ান অপারেশন প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্তির সৃষ্টি হয়েছে। আগামীকাল রবিবার অপারেশন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতে পারে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।  
যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও গাইনি বিভাগের চিকিৎসকরা জানান, মাস তিনেক আগে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওই নারীর দেহে এইডসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তখন তিনি ছয় মাসের গর্ভবতী ছিলেন। এখন তার সিজারিয়ান অপারেশন প্রয়োজন। কিন্তু এইডস আক্রান্ত এই রোগীর অপারেশন হাসপাতালে করা হলে পরবর্তী তিনদিন অপারেশন থিয়েটারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে। এই নিয়ে অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি, একজন রোগীর জন্য হাসপাতালের হাজারো রোগীর সমস্যা হয়, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া কর্তৃপক্ষের উচিত হবে না। 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন হাসপাতালে প্রায় ১৫-২০টি গাইনি প্রসূতি রোগীর ডেলিভারি সিজার হয়। এ ছাড়া, সার্জারি ৭-১০টা, অর্থপেডিক্স ৬-৮টা, ইএনটি ৩-৫টি, ডেন্টাল ২-৫টিসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ অপারেশন হয়ে থাকে। এই অবস্থায় হাসপাতালে তিনদিন অপারেশন বন্ধ থাকলে রোগীরা যাবে কোথায়? এ ছাড়া, জরুরি সড়ক দুর্ঘটনা, ছুরিকাহত রোগীদের অবস্থা কি হবে? তাই, হাসপাতালের চিকিৎসকসহ একাংশের দাবি এইডসে আক্রান্ত প্রসূতিকে বিশেষায়িত হাসপাতালে রেফার করে উন্নত সেবার ব্যবস্থা করা হোক। যেহেতু ওই নারীর ইলেকটিভ সিজারিয়ান অপারেশন এবং ঢাকায় তাকে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার মতো বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে। 
যশোর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ও গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গর্ভবতী ওই নারীর শরীরে এইচআইভি শনাক্ত হওয়ার পর তাকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রোগীকে কিভাবে চিকিৎসা দেওয়া হবে সেই চিন্তা শুরু হয় কর্তৃপক্ষের। সন্তান জন্মদানের সময় হয়ে আসায় হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার গত ২৮ মে ওই নারীর সিজারের দিন নির্ধারণ করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও নিরাপত্তার অভাব থাকায় তিনি করতে পারেননি। পরে রবিবার (১ জুন) নতুন দিন নির্ধারণ করেন তিনি। তবে, এরই মধ্যে এই অপারেশন নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। ফলে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই নারীর সিজার নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে।
এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গাইনি চিকিৎসক বলেন, এই রোগীর অপারেশন কোনো বিষয় নয়। বিষয়টি হচ্ছে, শরীর থেকে নির্গত রক্ত ও তরল উপকরণ কীভাবে এবং কোথায় নিষ্কাশন ও পরিশোধন করা হবে। সে বিষয়ে হাসপাতালে নির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। শতভাগ প্রস্তুতি ছাড়া এমন রোগীর সিজার করা হলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এ ছাড়া, আতঙ্কে থাকবেন অন্য প্রসূতিরা। তারাও ওটিতে অস্ত্রোপচারে যেতে অনীহা প্রকাশ করবেন। 
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মো. হুসাইন শাফায়াত বলেন, যশোর হাসপাতালে এর আগে এমন একটি অপারেশন (করোনাকালে) হয়েছে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে এই রোগীর সিজারিয়ান অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে ঢাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা ওই রোগীকে ২৮ মে সিজার করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সমস্যা দেখা দেওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এই অপারেশন নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। এখন গাইনি বিভাগই সিদ্ধান্ত নেবে তারা অপারেশন করবে, না রোগীকে রেফার করবে।
হাসপাতালের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, রোগী ডাক্তারের কাছে আসলে তার চিকিৎসা করা ডাক্তারের দায়িত্ব। আর সেই রোগীকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। গাইনি বিভাগ রবিবার ওই রোগীর সিজারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকিটা নিশ্চিত করবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
যশোরের সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা বলেন, এইডসে আক্রান্ত রোগীর সিজার সাধারণ হাসপাতালে করা ঝুঁকিপূর্ণ। আলাদা ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা  সম্পন্ন হাসপাতালেই এ ধরনের সিজার করা যুক্তিযুক্ত। এ জন্য সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থাপনা থাকা হাসপাতালে জরুরি।­

প্যানেল

×