ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ: মৃত্যু ও ভোগান্তির অবসান নেই

আব্দুল্লাহ আল মামুন, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, চকরিয়া, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৩০ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মরণ ফাঁদ: মৃত্যু ও ভোগান্তির অবসান নেই

চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যাওয়ার অন্যতম ব্যস্ততম সড়কটি আজ যেন এক মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই এই মহাসড়কে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা। যানজটে আটকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়, বেহাল সড়কের কারণে সাধারণ যাত্রী থেকে পরিবহন চালক—সবারই ভোগান্তি অসীম।

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে কক্সবাজারের উখিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কটির অবস্থা ভয়াবহ। বহু স্থানে খানাখন্দ, সংকীর্ণ ব্রিজ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং ভারী যানবাহনের অত্যাধিক চাপের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে। চলতি মাসেই অন্তত ১৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং শতাধিক আহত হয়েছেন। বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিল ২০২৫ এ চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় তিন দিনে তিনটি বড় দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত হন।

ব্যবসায়ী, পর্যটক, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করেন, তবে কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। সংস্কার কাজ অনেক জায়গায় বন্ধ, অন্য কিছু এলাকায় ধীরগতিতে চলছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী এলাকার এক পরিবহন চালক জানান, “প্রতিদিনই ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাই। কোথাও ব্রেক ফেল করে, কোথাও হঠাৎ গর্তে পড়ে যানবাহন উল্টে যায়।”

পর্যটন শহর কক্সবাজারের সঙ্গে রাজধানীর সহজ যোগাযোগের জন্য মহাসড়কের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু বিপজ্জনক অবস্থায় এটি পর্যটনের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়মতো সংস্কার ও সম্প্রসারণ না হলে মহাসড়ক আরও বিপজ্জনক হবে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে মৃত্যুর হার বাড়তে পারে।

চকরিয়া অংশে বেশ কয়েকটি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে, যা দুর্ঘটনার প্রধান কারণ:

  • চকরিয়া কলেজ মোড় (তীব্র বাঁক ও দৃশ্যমানতার অভাব)

  • হারবাং নতুন রাস্তার মোড় (গতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন)

  • বরইতলী মাদ্রাসা মোড় (খারাপ অবস্থা ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক)

  • গয়ালমারা ও ফাসিয়াখালী এলাকা (সরু সড়ক ও তীব্র বাঁক)

লবণবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কে লবণ পানি পড়ে স্লিপারির সৃষ্টি হয়, যা দুর্ঘটনা বাড়ায়। অভিজ্ঞতাহীন চালকরাও ঝুঁকিপূর্ণ এ রুটে দুর্ঘটনার কারণ।

স্থানীয়রা মহাসড়কটি ৪ বা ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলন ও লংমার্চ করেছে।

রোড অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্ট (RHD) লোহাগাড়া অংশে সড়ক দুই ফুট করে প্রশস্ত করছে ও দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে রাম্বল স্ট্রিপ বসাচ্ছে।

সরকার মহাসড়ককে ৬-৮ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে, যার মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে, সার্ভিস লেন, ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ থাকবে। তবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কারণে সম্প্রসারণে বিলম্ব হচ্ছে।

অতি দ্রুত মহাসড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ না হলে এর বিপজ্জনক অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে না।

 

রাজু

×