ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বৃদ্ধা মাকে মুরগীর খোপে আশ্রয় দিয়েছেন সন্তানরা!

সোহাইব মাকসুদ নুরনবী, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২২:৫০, ৩০ মে ২০২৫

বৃদ্ধা মাকে মুরগীর খোপে আশ্রয় দিয়েছেন সন্তানরা!

যে মা বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করে সন্তানদের লালন-পালন করেছেন, সেই গর্ভধারিণী মায়ের আশ্রয় হয়েছে মুরগী রাখার খোপে!
বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়া স্যাতস্যাতে পরিবেশে দীর্ঘ বছর যাবত বসবাস করছেন জনমদুঃখিনী মা। মুরগী রাখার এই খোপটিতে নেই কোনো কাঁথা, বালিশ, এমনকি হাওয়া-বাতাসও ঠিকঠাক চলতে পারে না। দেখা যায়, এমন একটি ঘরেই কোনোমতে খুটুমুটু করে বসে আছেন অসহায় মা, একটু পর পর খাবারের জন্য করছেন ডাকচিৎকার। কিন্তু কে শোনে তার চিৎকার?

স্থানীয়রা জানান, ঝড়-বাদল যাই হোক না কেন, সকাল হলেই বৃদ্ধা মাকে মুরগীর খোপে রেখে কাজে চলে যান সন্তান ও পুত্রবধূরা! এসময় তাদের থাকার ঘরটিও তালাবদ্ধ করে রেখে যান। নিরূপায় হয়ে খাবারের আশায় নড়বড়ে শরীর নিয়ে বাড়ি-ঘর ছুটে বেড়ান জনমদুঃখিনী মা।

সম্প্রতি আছাড় খেয়ে মাথা ফেটে যাওয়াসহ হাত ভেঙে গেছে বৃদ্ধা মা নুরজাহান বেগমের। সারাদিনের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন তিনি। এছাড়াও একটু পানি খাওয়ার জন্য করছেন তীব্র আহাজারি। কিন্তু একাকী বাড়িতে তার করুণ আহাজারী শোনার যেন কেউ নেই। কারণ আদরের ছেলেরা ঘর তালাবদ্ধ করে রেখে সকাল বেলাই চলে যান এদিক-সেদিক, ফেরেন আবার সন্ধ্যায়!

সম্প্রতি বন্যার কারণে জোয়ারের পানিতে থই থই করছে নুরজাহানের থাকার খোপটির চারপাশ, এতে যেন তার মধ্যে কাজ করছে এক অজানা আতঙ্ক।

দুঃখজনক এই ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠী ইউনিয়নের দক্ষিন লাউকাঠী গ্রামে।

অবহেলিত বৃদ্ধা মায়ের দুই সন্তানের কাছে জানতে চাইলেও তাদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি!

দশ মাস দশ দিনের তীব্র কষ্ট, প্রসব বেদনা, নিজে না খেয়েও সন্তানকে খাওয়ানো, ছোট থেকেই আদর যত্ন, সন্তানদের শখ-আহ্লাদ পূরণ করে বড় করা – এত ত্যাগ স্বীকার করেও মা নামক এই জান্নাতের টিকিট কি শেষ বয়সে এসেও একটু যত্নের ভাগিদার হতে পারেন না? অবশ্যই মানুষ হিসেবে আজীবন মায়ের প্রতি আদর, যত্ন ও ভালোবাসা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এজন্য প্রয়োজন আমাদের মানবিকতাবোধ, শিক্ষিত হওয়ার আগে প্রয়োজন মানুষ হওয়া। তবেই পৃথিবী হবে আরও সুন্দর।

 

রাজু

×