ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভাঙা ব্রিজে জনদুর্ভোগ, দশ বছরেও মেলেনি সংস্কার

সাখাওয়াত সাকিব, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মীরসরাই (চট্টগ্রাম)

প্রকাশিত: ২০:২৬, ৩০ মে ২০২৫

ভাঙা ব্রিজে জনদুর্ভোগ, দশ বছরেও মেলেনি সংস্কার

চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলার ৯ নম্বর মীরসরাই সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত একটি পুরনো সেতু দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত ব্রিজটি ২০১৫ সালে ধসে পড়ে। এরপর এক দশক পার হলেও নেওয়া হয়নি কোনো সংস্কার উদ্যোগ। ফলে বর্তমানে এটি পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অথচ এই ব্রিজটি ছিল আশপাশের গ্রামগুলোর প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের একমাত্র যাতায়াতের পথ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ব্রিজটির মাঝখানের অংশ ধসে পড়েছে, রেলিং ভেঙে গেছে, ভেতরের রড বের হয়ে আছে এবং পিলারে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। দুটি বড় গর্ত হয়ে যাওয়ায় এখন হেঁটেও চলাচল করা কষ্টকর। তবুও বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা।ব্রিজটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার শত শত শিক্ষার্থী যাতায়াত করে। সাজেদিয়া নুরানী ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মাওলানা আতা উল্ল্যাহ বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিদিন আড়াই শতাধিক শিশু এই ভাঙা ব্রিজ দিয়ে যাতায়াত করে। আমরা সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকি, কখন কী হয়ে যায়।”

মিঠাছরা আইডিয়াল স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাজিম উদ্দিন বলেন,“আমার স্কুলসহ আশপাশের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা এই ব্রিজ ব্যবহার করে। দীর্ঘদিনের অবহেলায় এটি এখন বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি করেছে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমরাও প্রতিনিয়ত আতঙ্কে থাকি।”

শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা নাইমুল হুদা জানান,“মিঠাছরা বাজার এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। কৃষকরা এই ব্রিজ ব্যবহার করে পণ্য আনা-নেওয়া করতেন। এখন তা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।”

ব্যবসায়ী নুর সোবহান বাদশা বলেন,“প্রতিদিনই মানুষ এই ব্রিজে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। দ্রুত এটি পুনর্নির্মাণ ছাড়া উপায় নেই।”

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মীর হোসেন জানান,“আগে নিয়মিত যাত্রী আনা-নেওয়া করতাম। ব্রিজ ভেঙে যাওয়ায় এখন আর এই পথে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। আয়-রোজগারও কমে গেছে।”

শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম সাঈদ বলেন,“এই ব্রিজটি আমাদের এলাকার মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন এটি ভেঙে যাওয়ায় সড়কের এক পাশ থেকে অন্য পাশে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ। জরুরি প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও যেতে পারে না। দ্রুত সংস্কার একান্ত প্রয়োজন।”

মীরসরাই উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী রনি সাহা জানান,“ব্রিজটি সম্পর্কে পূর্বে আমাকে কেউ অবহিত করেনি। সম্প্রতি বিষয়টি জানতে পেরেছি। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”

এ অবস্থায় সম্প্রতি এলাকাবাসী মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) বরাবর একটি লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন। আবেদনপত্রে ব্রিজটি দ্রুত পুনর্নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

রাজু

×