ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শরীয়তপুরে কালোজিরা চাষ ও মৌচাষের সমন্বয়ে কৃষিতে বিপ্লব

বিপ্লব হাসান হৃদয়, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শরীয়তপুর

প্রকাশিত: ২০:২০, ৩০ মে ২০২৫

শরীয়তপুরে কালোজিরা চাষ ও মৌচাষের সমন্বয়ে কৃষিতে বিপ্লব

শরীয়তপুর জেলার মাঠজুড়ে এখন এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য—কালোজিরার ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন আর খামারিদের ব্যস্ততা। জেলার কৃষিক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। কালোজিরা চাষের পাশাপাশি মৌ-বাক্স স্থাপন করে একযোগে লাভবান হচ্ছেন কৃষক ও মৌচাষিরা। এতে বাড়ছে ফসলের উৎপাদন, একই সঙ্গে আহরণ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ মধু—দুইয়ে মিলে গড়ে উঠছে এক সমন্বিত কৃষি অর্থনীতি।

জানা গেছে, বর্তমানে জেলায় মোট ৩০টি মৌ খামার রয়েছে। প্রতিটি খামারে রয়েছে ৫০ থেকে ২০০টি পর্যন্ত মৌ-বাক্স। এসব বাক্সে থাকা মৌমাছিরা কালোজিরার ফুল থেকে রেণু সংগ্রহ করে তৈরি করছে প্রাকৃতিক মধু। মৌচাষিরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ব্যস্ত থাকছেন বাক্সগুলোর পরিচর্যা ও মধু সংগ্রহে।

ফসলের উৎপাদন বাড়ছে পরাগায়নের কারণে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌমাছির পরাগায়নের ফলে গাছের ফলন অনেক বেড়ে যায়। ফলে শুধু মধু নয়, কৃষকরাও পাচ্ছেন অধিক ফসল। কালোজিরা একটি অত্যন্ত মৌ-উপযোগী ফসল। এর ফুলে থাকে প্রচুর রেণু ও মধু, যা মৌমাছিদের আকৃষ্ট করে। ফলে ফসলের মাঠে মৌবাক্স বসালে কৃষক ও মৌচাষি—উভয়েই লাভবান হন।

মধু উৎপাদনে নতুন রেকর্ডের পথে শরীয়তপুর
চলতি মৌসুমে শরীয়তপুরে ১৫ হাজার কেজি কালোজিরার মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে গত মৌসুমে আহরণ হয়েছিল ১১ হাজার ৩৭০ কেজি। স্থানীয় উদ্যোক্তারা মনে করছেন, উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সঠিক সমন্বয় হলে এই মৌসুমেই জেলার মধু খাত থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার রাজস্ব অর্জন সম্ভব।

কালোজিরার বিস্তৃত চাষাবাদ
শরীয়তপুরের সেনেরচর, বড় গোপালপুর, পালেরচর, জয়নগর, বিলাশপুর ও নড়িয়ার চাকধ—এই এলাকাগুলোতে বর্তমানে বিস্তৃত আকারে কালোজিরা চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে কৃষকরা কালোজিরা আবাদ করছেন এবং পাশাপাশি বসানো হচ্ছে মৌবাক্স। ফলে জমির ব্যবস্থাপনায় এসেছে নতুনত্ব।

কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন জানান, “আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি যেন তারা আরও বেশি মৌবাক্স স্থাপন করেন। এতে শুধু মধু নয়, তাদের মূল ফসলের উৎপাদনও অনেক বেড়ে যাবে।”

তিনি আরও বলেন, “এই উদ্যোগ সফল হলে শরীয়তপুর কৃষি ও মৌচাষে একটি মডেল জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে কিছু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে যাতে মৌচাষিরা প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পান।”

সমন্বিত কৃষি অর্থনীতির সম্ভাবনা
স্থানীয় অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, এ উদ্যোগ শুধু কৃষি নয়, সার্বিক অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। মৌচাষ ও মধু প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে তৈরি হবে নতুন উদ্যোক্তা, বাড়বে কর্মসংস্থান এবং তৈরি হবে রপ্তানির সুযোগ।

শরীয়তপুরে কালোজিরা চাষ ও মৌচাষের এই যুগলবন্দি যদি সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়, তাহলে জেলার কৃষি অর্থনীতি পৌঁছাবে এক নতুন দিগন্তে। সরকারের সহায়তা, কৃষকদের আগ্রহ এবং মৌচাষিদের পরিশ্রমের সম্মিলনে গড়ে উঠতে পারে দেশের অন্যতম বৃহৎ মধু উৎপাদন কেন্দ্র।

রাজু

×