ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুড়িগ্রামে বেকার নয়, এখন সবাই উদ্যোক্তা!

রফিকুল ইসলাম রফিক, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২৭ মে ২০২৫

কুড়িগ্রামে বেকার নয়, এখন সবাই উদ্যোক্তা!

বাংলাদেশের অন্যতম সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম যেখানে একসময় নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অবকাঠামোগত দুর্বলতা বেকারত্বের চক্রকে করেছিল স্থায়ী ও ভয়াবহ। কিন্তু এখন বদলে যাচ্ছে চিত্র। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের নেতৃত্বে খুলছে আত্মনির্ভরতার নতুন দরজা।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কুড়িগ্রামে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি), মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার যুবক-যুবতীকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সেলাই, আইটি, হাঁস-মুরগি পালন ও কৃষিভিত্তিক ক্ষুদ্র উদ্যোগের উপর এই প্রশিক্ষণ তাদের জীবন বদলে দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “এই জেলার মানুষ অনেক প্রতিভাবান। আমরা তাদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে বেকারত্ব থাকবে না। বর্তমানে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মনির্ভরশীল হয়েছেন।”

রাজারহাট উপজেলার রাশেদুল ইসলাম মাত্র ২৫ বছর বয়সে গড়ে তুলেছেন একটি আধুনিক হাঁস-মুরগির খামার। তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণ ছাড়া এই পথে আসা হতো না। এখন আমি নিজে উপার্জন করছি, সঙ্গে পাঁচজনকে চাকরিও দিয়েছি।”

তেমনই এক দৃষ্টান্ত উলিপুর উপজেলার সুফিয়া বেগম। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি নিজেই চালু করেছেন একটি গার্মেন্টস প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তার কথায়, “নারীদের কর্মসংস্থান হলে পুরো পরিবারের জীবনমান বদলায়।”

সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক, সাইডওয়াল্ক ফাউন্ডেশন ও এসডিআরসি (SDRC)-এর সহযোগিতায় কুড়িগ্রামে স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে এসেছে গতি। অনেকেই এই ঋণ ও প্রশিক্ষণের সহায়তায় শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা।

অর্থনীতিবিদ ড. নূরুল আমিন বলেন, “কুড়িগ্রামে বেকারত্ব মোকাবিলায় যেসব বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা দেশের অন্যান্য জেলার জন্যও অনুকরণীয়। তবে আরও প্রযুক্তিনির্ভর ও বাজারমুখী প্রশিক্ষণ জরুরি।”

কুড়িগ্রাম এখন আর শুধুই নদীভাঙনের জেলা নয়, এটি হয়ে উঠছে উদ্যোক্তা তৈরির এক উজ্জ্বল মডেল। সরকারি ও বেসরকারি সমন্বিত প্রয়াসে জেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে আত্মনির্ভরতার বাতিঘর। প্রয়োজন শুধু এই অগ্রযাত্রাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা এবং আরও সম্প্রসারিত করা।

মিমিয়া

×