ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে তীব্র খাদ্য সংকট

লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর আনাগোনায় বাড়ছে উদ্বেগ

মোঃ মাসুদ আলম,চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ

প্রকাশিত: ০৯:৫৬, ২৪ মে ২০২৫

লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর আনাগোনায় বাড়ছে উদ্বেগ

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে বনের বন্যপ্রাণীরা খাবারের সন্ধানে গহীন অরণ্য ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং বন্যপ্রাণীদের জীবনও ঝুঁকিতে ফেলছে। বিশেষ করে বানর, মায়া হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী এখন প্রায়ই লোকালয়ে বা সড়কের আশেপাশে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। 

বন বিভাগের তথ্য মতে, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান প্রায় ২৪৩ হেক্টর বা ৬০০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এবং এটি প্রায় ১৯৭ প্রজাতির জীবজন্তু, ২৪ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ১৫০ থেকে ২০০ জাতের পাখির আবাসস্থল। শাল, সেগুন, আগর, গর্জন, চাপালিশ, পাম, মেহগনি, কৃষ্ণচূড়া, ডুমুর, জাম, জামরুল, সিধাজারুল, আওয়াল, বাঁশ ও বেতগাছ সহ প্রায় ২০০'র বেশি প্রজাতির গাছপালা এই উদ্যানে বিদ্যমান। এর অন্যতম কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত বনায়ন এবং বনের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে লেবু বাগান তৈরি করাকে দায়ী করছেন পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা। সাতছড়ি ত্রিপুরাপল্লীর হেডম্যান চিত্তরঞ্জন বর্মাও বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকটের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়াও, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানের রিজার্ভ ফরেস্টের অভ্যন্তরে বিশাল জায়গা দখল করে প্রভাবশালীরা লেবু বাগান তৈরি করেছে, যার পরিমাণ প্রায় ৪০০-৫০০ একর। এতে বনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে এবং বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকট আরও তীব্র হচ্ছে।

লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর আনাগোনা:
খাদ্যের অভাবে বানর এখন উদ্যানের ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে সরাসরি খাবার চাইছে। অনেক পর্যটককে বানরদের কলা বা অন্যান্য খাবার কিনে দিতে দেখা যাচ্ছে। হরিণের দলকেও দিনের বেলায় লোকালয়ের নিকটবর্তী লেবু বাগানে চলে আসতে দেখা যাচ্ছে, যদিও মানুষের শব্দ পেলেই তারা দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। বানর এবং অন্যান্য প্রাণীরা ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক পারাপার হওয়ার সময় যানবাহনের চাপায় প্রাণ হারাচ্ছে বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে এমন ঘটনাও ঘটছে। 

বন বিভাগের বক্তব্য ও পরিবেশবিদদের উদ্বেগ, যদিও বন বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে খাদ্য সংকটের কারণে বন্যপ্রাণীদের লোকালয়ে আসার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন, তাদের মতে "স্বাভাবিক কারণেই বানর জঙ্গলের বাইরে আসে।" তবে, পরিবেশবিদ ও স্থানীয়রা মনে করছেন, এই প্রবণতা কোনোভাবেই স্বাভাবিক নয় এবং এটি বন্যপ্রাণীদের জন্য একটি বিপদ সংকেত। জাতীয় উদ্যান ঘুরতে আসা পর্যটক জসিম মিয়া বলেন, "বানরগুলো লোকালয়ে এসে মানুষের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক নিয়মে বেড়ে উঠা বানরগুলো বনের গাছের ফলমূল লতাপাতা খেয়ে বাঁচবে এটাই নিয়ম।" তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের ফেলে দেওয়া খাবার খেয়ে বানরগুলো অলস হয়ে পড়ছে।

নোভা

×