ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পটুয়াখালীতে মুগ ডালের বাজার মধ্যস্বত্তভোগীদের নিয়ন্ত্রণে, দিশেহারা কৃষক

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটুয়াখালী।

প্রকাশিত: ১৮:০৩, ২৩ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:০৫, ২৩ মে ২০২৫

পটুয়াখালীতে মুগ ডালের বাজার মধ্যস্বত্তভোগীদের নিয়ন্ত্রণে, দিশেহারা কৃষক

মধ্যস্বত্তভোগীদের কবলে পটুয়াখালীর মুগ ডালের বাজার। বড় বড় রাঘোব বোয়ালরা স্থানীয় বাজারগুলিতে নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে সিন্ডিকেট তৈরী করে নিয়ন্ত্রণ করছে মুগ ডালের দাম। শুধু তাই নয় মাপের ক্ষেত্রে রয়েছে তাদের নিয়ন্ত্রণ। ৪০ কেজিতে ১ মণ হলে তা বাজার ভেদে ৪২ থেকে ৪৮ কেজিতে তারা পরিমাপ করে। এমনি ভাাবে পটুয়াখালীর বাজার গুলি নিয়ন্ত্রণ করা কারণে কৃষকরা তাদের ন্যায্য মুল্য পাচ্ছে না। আগ্রহ হারাতে বসেছে মুগডাল চাষে। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরে পটুয়াখালীর ৮ টি উপজেলায় মুগ ডালের বাম্পার ফলণ হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুযায়ী প্রতি বছর বাংলাদেশে যে মুগ ডাল উৎপাদিত হয় তার ৪৫ ভাগ ডাল পটুয়াখালীতেই উৎপাদন হয়।  


উন্নতমানের বীজ, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এ বছর পটুয়াখালীতে মুগডালের বাম্পার ফলন হয়েছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে বিদেশে রপ্তানি করা হয় এই ডাল। বিগত বছরের চেয়ে এ বছর ডাল উৎপাদনে লক্ষমাত্রা ছরিয়ে যাবে বলে জানালেন কৃষি বিভাগ। দেশে সব থেকে বেশি মুগ ডাল পটুয়াখালী জেলায় উৎপাদিত হয়। এই অঞ্চলের মাটি ডাল চাষের জন্য উপযোগী। এবার অনুকূল আবহাওয়া এবং আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় জেলায় মুগ ডালের বাম্পার ফলন হয়েছে। এখানকার উৎপাদিত মুগডাল জাপান কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়া এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় একর প্রতি ২৭০০ থেকে ২৮০০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া গেছে। 


মুগ ডালের এমন বাম্পার ফলনেও স্বস্থ্যি নেই কৃষকের। বিদেশে রপ্তানি হওয়ার কারনে মুগ ডালের বাজার দৃষ্টি পরেছে বড় বড় কোম্পানীর। তার স্থানীয় বাজারগুলিতে প্রতিষ্ঠিত করেছে মধ্য স্বত্ত ভোগী শ্রেনী। যারা এলাকায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এক মন (৪০ কেজি)’র মুল্য ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫’শ। যা তারা আবার ঐ সব বড় বড় কোম্পানীর কাজে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মনে বিক্রি করছে। এ ছাড়া পরিমাপের ক্ষেত্রেও ৪০ কেজির পরিবর্তে ৪২ থেকে ৪৮ কেজিও নিয়ে নেয় কৃষকদের কাছ থেকে। এমন পরিস্থিতে কৃষকদের দাবি এই মধ্যস্বত্তভোগীদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সম্ভাবনাময় এই অর্থকরী ফসল উৎপাদনে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে কৃষকরা।   


কৃষি সম্প্রসারণের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ি চলতি বছর পটুয়াখালী জেলায় ৮৮ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ১’শ ১৪ মেঃ টন। যা গত বছরের চেয়ে ২০ হাজার মেঃ টন বেশি।


স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মুগ ডালের বাম্পার ফলন হলেও তার সুফল তারা পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্তভোগীরা তা লুটে নিচ্ছে। এতের কারনে বর্তমানে তার ৩২’শ থেকে ৩৫’শ টাকায় এক মণ ডাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। মধ্যস্বত্তভোগীদের দৌড়াত্ব না থাকলে মণ প্রতি তারা ৪ থেকে সাড়ে ৪ টাকা পেতেন। পরিমাপের ক্ষেত্রে ৪০ কেজিতে মন ধরা হলেও সিন্ডিকেটের কারনে বাজার ভেদে তারা ৪২ থেকে ৪৮ কেজি পর্যন্ত পরিমাপ নিয়ে থাকেন। কৃষকরা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ব নিয়ন্ত্রনের জন্য দাবি জানিয়েছেন। 


পটুয়াখালী কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ নজরুর ইসলাম জানান, ডাল ব্যবসার সাথে জড়িত বড় বড় কোম্পানীগুলি তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়েগের মাধ্যমে বাজারগুলিতে সিন্ডিকেট করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা যে শুধু ডালের মুল্য নিয়ন্ত্রণ করছে এমন নয়। তারা পমিাগের ক্ষেত্রেও করছে নয় ছয়। এ বিষয়ে জেলা প্রশানের মাধ্যমে বাজারগুলিতে বাজার গুলিতে নজরদারী করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয় হচ্ছে। এ ছাড়াও কৃষি মন্ত্রনালয়ের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে বাজার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।    


চলতি বছর পটুয়াখালী জেলায় ৮৮ হাজারের বেশি হেক্টর জমিতে মুগডাল চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ১’শ ১৪ মেঃ টন। যা গত বছরের চেয়ে ২০ হাজার মেঃ টন বেশি। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি উৎপাদন হয় বাউফল উপজেলায়। যার পরিমান১৩ হাজার ৮’শ ৮৫ মেট্রিকটন। 
 

রিফাত

×