
ছবি :সংগৃহীত
কাগজের নতুন মুদ্রার নকশায় দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যসহ আসছে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, নতুন করে ছাপানো মুদ্রায় কোনও ব্যক্তির ছবি থাকছে না। শেখ মুজিবুর রহমানসহ কোনও রাজনৈতিক নেতা বা বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মুখাবয়বও থাকবে না নতুন নোটে।
তবে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে অংশ নেওয়া তরুণদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু প্রতীকী চিত্র ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও নির্দিষ্ট ব্যক্তির মুখ চেনা যাবে না। নতুন নোটে যে প্রতীকী অবয়ব থাকবে— তা হবে তরুণদের সংগ্রামের প্রতিনিধিত্বকারী, কিন্তু নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তি নয়।’
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, নতুন মুদ্রার নকশায় রাষ্ট্রীয় ঐক্য, ভবিষ্যৎমুখী মূল্যবোধ এবং তরুণ প্রজন্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক হিসেবে কিছু নতুন প্রতিচ্ছবি যুক্ত হচ্ছে। এতে কোনও রাজনৈতিক বিভাজন বা বিতর্কের সুযোগ না রেখে একটি সর্বজনীন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
নতুন নোটের ডিজাইন ও প্রতীক
জানা গেছে, প্রথম ধাপে বাজারে আসছে নতুন নকশার ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট। এসব নোটে আগের মতো শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকছে না। এর পরিবর্তে ফিরে আসছে আগের কিছু ঐতিহাসিক নকশা এবং উল্লেখযোগ্য সময়ের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ‘জুলাই অভ্যুত্থানের’ গ্রাফিতির চিত্র।
৫ টাকার নোটের ডিজাইনে তরুণদের সংগ্রামকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে কিছু মুখাবয়ব থাকলেও তা স্পষ্টভাবে কোনও ব্যক্তির চেহারা নয়। তরুণদের আন্দোলন এবং সাহসিকতার এই প্রতীক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নাগরিক সংগ্রামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এক নতুন ধারা সূচিত করছে।
অপরদিকে, ১০ টাকার নতুন নোটে থাকবে জাতীয় মসজিদ ‘বায়তুল মোকাররম’ এবং যুবঐক্যের চিত্র, ১০০ টাকার নোটে স্থান পাচ্ছে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও হরিণ, ২০০ টাকায় থাকবে বাংলাদেশের ধর্মীয় বৈচিত্র্য এবং ৫০০ টাকার নোটে থাকবে ঐতিহাসিক আহসান মঞ্জিলের ছবি।
মুদ্রণ কার্যক্রম ও বিতরণ পরিকল্পনা
২০ টাকার নোট ছাপা প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী সপ্তাহে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর ধাপে ধাপে ছাপা হবে ৫০ ও ১০০০ টাকার নোট।
ঈদুল আজহার আগেই সীমিত আকারে এসব নতুন নোট বাজারে ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রাথমিকভাবে এসব নোট সরবরাহ করা হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসসহ অন্যান্য শাখায় এবং পরবর্তী সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে বিতরণ করা হবে।
বিতর্ক, সিদ্ধান্ত ও জনপ্রতিক্রিয়া
চলতি বছরের মার্চে বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত নতুন নোট নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ১০ মার্চ সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের একটি চিঠি পাঠায়। সেখানে বলা হয়, নতুন নোটের বিনিময় কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে হবে এবং ব্যাংকের শাখাগুলোতে সংরক্ষিত নতুন নোট আপাতত বিনিময় করা যাবে না। এর ফলে বাজারে ছেঁড়াফাটা ও পুরনো নোটের পরিমাণ বেড়ে যায়, যা জনগণের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে নতুন নোটের ডিজাইনের বিষয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ একে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিফলন ও তরুণ সমাজের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ এই হঠাৎ পরিবর্তনকে আর্থিকনীতির অস্থিরতা ও বাজারে বিভ্রান্তি তৈরির আশঙ্কা হিসেবে দেখছেন।
রাষ্ট্রীয় প্রতীকে নতুন অধ্যায়
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এই নতুন নোট কেবল অর্থনৈতিক লেনদেনের মাধ্যম নয়, বরং এটি রাষ্ট্রীয় প্রতীকের পুনর্বিন্যাস। এখানে বর্তমান সময়ের চেতনা, তরুণদের সংগ্রাম, ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা ও ভবিষ্যতের বার্তা একত্রে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
নতুন ডিজাইনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইছে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যৎমুখী বার্তা ছড়িয়ে দিতে—যেখানে অতীতের গৌরব, বর্তমানের চ্যালেঞ্জ ও আগামীর সম্ভাবনা একাকার হয়ে যাবে বিভিন্ন মানের কাগজের টাকার নোটে।
সা/ই