
ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও বিশ্লেষক আব্দুন নূর তুষার বলেছেন, “আমি তো দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের চর্চা করেছি বাংলাদেশে। আজকের ঘটনাগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন একটা চমৎকার বিতর্ক দেখছি। কিছুক্ষণ পর যখন বলতে উঠলাম, তখন বুঝলাম— এটা তো বিতর্ক না, বাস্তবতা।”
তুষার বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সরকার, এবং সেই সরকার নিজেই বলে এসেছে— এই সরকারের নিয়োগদাতা হচ্ছে ছাত্ররা। সেই ছাত্রদের প্রধান দল হচ্ছে এনসিপি। অর্থাৎ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে এনসিপি। অথচ এখন এনসিপি-ই বলছে, তারা এই নির্বাচন কমিশনকে মানে না— শুধুমাত্র একটি সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ার কারণে।”
তিনি বলেন, “ইশরাকের মামলায় নির্বাচন কমিশন আপিল না করায় এনসিপি অসন্তুষ্ট। যদিও আপিল করাটা কোনো ফরজ বিষয় নয়, এটি হতে পারত একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ। তবে এ কথাও মাথায় রাখতে হবে, ইশরাক যে মামলা করেছিলেন তা ছিল আগের নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে, যেটি শেখ হাসিনার আমলে গঠিত হয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তো তাদের নিজস্ব সরকার দ্বারা নিযুক্ত।”
তুষার মন্তব্য করেন, “এই নির্বাচন কমিশন মনে করেছে, যিনি আন্দোলন করেছেন, বিপ্লব করেছেন, তিনি যদি মেয়র হন তাতে সমস্যা কোথায়? এজন্য তারা বাধা দেয়নি। যেমন আন্দোলনকারীরা সরকারের অংশ হয়েছেন, তাদের তো কেউ বাধা দেয়নি, এমনকি বিএনপিও পদত্যাগ দাবি করেনি। ফলে, এনসিপি কেন নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিতে পারছে না, এটা প্রশ্নসাপেক্ষ।”
তিনি আরও বলেন, “আমার ব্যক্তিগত মত হলো—এনসিপি ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তরে একজন মেয়র বসিয়েছে, যিনি তাদের পরামর্শেই নিযুক্ত হয়েছেন। এখন তারা দক্ষিণেও তাদের পছন্দের একজন মেয়র চায়। তারা চান না মেয়র নিয়োগের ক্ষমতা ছাত্র উপদেষ্টার হাতছাড়া হোক। তারা চায় না কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মেয়র হোক, বরং একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি হলে তাদের জন্য সুবিধা হবে। কারণ এনসিপি চায় ঢাকা শহরের স্থানীয় নির্বাচন তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকুক, যদিও জাতীয় পর্যায়ে নির্বাচন না হলেও। এটিই হচ্ছে মূল বিষয়।”
আরও সংবেদনশীল একটি প্রসঙ্গ টেনে তুষার বলেন, “২০২২ সালে যে আইনটিকে বাকশালী আইন বলা হয়, তার ভিত্তিতে এই সরকার গঠিত হয়েছে এবং সেই রেফারেন্স প্রদানকারী বিচারপতিদের অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু শুধু এই আইন দেখিয়ে বলাটা ঠিক নয় যে, নির্বাচন কমিশন অযোগ্য। আসল প্রশ্ন হলো—তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে কি না।”
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো একটি ফেয়ার, রিজনেবল এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা। বাংলাদেশে নির্বাচন চলাকালে কমিশনকে বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়—সরকারি প্রশাসনের অনেক কিছুই কমিশনের অধীনে চলে আসে যাতে নির্বাচন নিরপেক্ষ থাকে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে এই কমিশন একটি নির্বাচনে অন্যায্য আচরণ করেছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “ইশরাকের মামলায় আপিল না করাটা যদি কমিশনের একমাত্র ‘অন্যায়’ হয়, তাহলে চট্টগ্রামের মেয়র হিসেবে যিনি নিযুক্ত হয়েছেন, তিনি তো একজন ডাক্তার— এই কমিশনের মাধ্যমেই নিযুক্ত। কাজেই একটি সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়াই কমিশনকে অগ্রহণযোগ্য প্রমাণ করে না।”
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=vhDE-UP4pKA
এম.কে.