ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রাম বন্দর অচল করার হোয়াটসঅ্যাপের গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস

প্রকাশিত: ০৭:৪৪, ২০ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দর অচল করার হোয়াটসঅ্যাপের গোপন ষড়যন্ত্র ফাঁস

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে ষড়যন্ত্রমূলক আলোচনার একটি গোপন হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর প্রশাসনে শুরু হয়েছে তোলপাড়। একটি গোপন গ্রুপে বন্দর অচল করে দেওয়ার হুমকি, বিদেশি অপারেটর আনার বিরোধিতা, এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের আলোচনা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। এসব তথ্য সামনে আনেন নৌ পরিবহন উপদেষ্টা।

 

ঘটনাটি ঘটে গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরের এক গুরুত্বপূর্ণ সভায়। সভায় অংশ নিয়ে নৌ উপদেষ্টা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ “বন্দর রক্ষা আন্দোলন”–এর কথোপকথনের চ্যাট সবাইকে পড়ে শোনান। এতে বিদেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং অপারেটর আনার প্রক্রিয়া নিয়ে একদল প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং রাজনৈতিক নেতার আপত্তির তথ্য উঠে আসে।

ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, কথিত আলোচনায় বন্দর অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন এক সদস্য। তিনি বলেন, “যা টাকা লাগে দেব, আমার কোনো আপত্তি নেই। যা করার করেন, সবাই মিলে বন্দর অচল করে দেব।” ওই আলোচনায় বিএনপি নেতা নাজিমুর রহমান এবং সাইফ পাওয়ারটেকের মালিক রুহুল আমিন তরফদারের নাম উঠে আসে। স্থানীয় রাজনীতিক নাসিরের নামও উচ্চারিত হয়।

 

 

কথোপকথনে আরও দেখা যায়, সবাইকে নিয়ে জরুরি মিটিংয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়, এবং প্রচারণা চালাতে বলা হয় যে বিদেশি কোম্পানি এলে স্থানীয়দের চাকরি হারাতে হবে—তাই বন্দর অচল করে দেওয়া হবে। “ইউসুফ, তুমি আজকে সবাইকে নিয়ে মিটিং করবে,” — এমন নির্দেশনাও ছিল ওই চ্যাটে।

বিষয়টি নিশ্চিত করতে যোগাযোগ করা হয় নগর বিএনপির সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, “উপদেষ্টা যেটা বলেছেন, সেটা উনিই ভালো বলতে পারবেন। এটা কোন নাজিমের কথা বলছেন, আমি বুঝতে পারছি না।” বিষয়টিকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলছেন রুহুল আমিন তরফদার। তার ভাষায়, “লোকগুলোকে আমি চিনি না। গত ছয় মাসেও কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি। ফ্যাব্রিকেট করে আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

 

 

বন্দর কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। তবে বন্দরের কেউই এ নিয়ে ক্যামেরার সামনে মুখ খুলতে রাজি হননি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে ও বিশ্বমানের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার প্রায় ৮৫% আসে এই বন্দর-নির্ভর সেক্টর থেকে, যা এখন প্রতিযোগিতা করছে চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে।

নৌ পরিবহন উপদেষ্টার ভাষায়, “আমি যদি একজন বিশ্বমানের অপারেটর আনতে চাই, আর তাতে যদি আপত্তি করা হয়, তাহলে এই বন্দর কখনওই বিশ্বমানের হবে না।”

 

 

উল্লেখ্য, এ সভাটি অভ্যন্তরীণ ছিল এবং কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে ফাঁস হওয়া ভিডিও ও কথোপকথন এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আঁখি

×