ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আজও চলবে কর্মসূচি

ইশরাককে মেয়র দাবিতে নগর ভবন এলাকায় ব্লকেড পালন

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৪, ২০ মে ২০২৫

ইশরাককে মেয়র দাবিতে নগর ভবন এলাকায় ব্লকেড পালন

ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে সোমবার নগরভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে সোমবার সকাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান কার্যালয় ও আশপাশ এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছে তার সমর্থকরা। এ সময় গুলিস্তানের প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। ফলে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত এ এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। এ ছাড়া গত পাঁচদিন ধরে ডিএসসিসি’র নগর ভবন কার্যত অবরুদ্ধ থাকায় সেবা প্রত্যাশীদের ফিরে যেতে দেখা গেছে। তাই এ বিষয়ে সরকারকে আন্তরিকভাবে সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান তারা। 
একই দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারীরা। মঙ্গলবারও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে ইশরাকের সমর্থকরা। এ ছাড়া ইশরাক হোসেনের শপথ সংক্রান্ত ইস্যুতে দশটি বাধা আছে বলে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে যে পোস্ট দিয়েছেন তাকে চরম মিথ্যাচার বলেও আখ্যা দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। 
ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে আন্দোলনকারীদের নতুন কর্মসূচির বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সাবেক সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে মঙ্গলবারও সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে।’ এখনো কেন ইশরাক হোসেনের শপথের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না- এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। যদি আগামীকালের (মঙ্গলবার) মধ্যে এই দাবি মেনে নেওয়া না হয়, এর খেসারত সরকারকেই দিতে হবে। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই।
এর আগে সোমবার বেলা ১১টা থেকে নগরভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টার কর্মসূচির আগে থেকেই নগর ভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরে বঙ্গ মার্কেট এলাকা ব্লকেড করে দেয় আন্দোলনকারীরা। একইসঙ্গে গোলাপ শাহ মাজারের রাস্তাটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। কার্যত সকাল থেকেই অচলবস্থা বিরাজ করে নগর ভবন, পুলিশ হেডকোয়ার্টারসহ আশপাশের এলাকায়।
আন্দোলনকারীরা জানান, জনগণের ভোটের রায় শেখ হাসিনা ছিনিয়ে নিয়েছিল। আদালতের রায়ে ভোটের মর্যাদা ফিরে পাওয়া গেছে। নির্বাচন কমিশনও গেজেট দিয়েছে। কিন্তু এই সরকারের লোকজন তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে না। অবিলম্বে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে হবে।
এ দিকে সকাল থেকেই নগর ভবনের সামনে স্টেজ বানিয়ে অবস্থান করে নগর ভবন এলাকায় ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে গেল পাঁচদিন ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর আগে গত শনিবার এবং রবিবার সচিবালয় অভিমুখে হাজার হাজার নগরবাসীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেন আন্দোলনকারীরা। 
অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের ভেতরে যাওয়ার সব গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দপ্তরে বসতে পারছেন না। ফলে জরুরি প্রয়োজনে নগর ভবনে আসা সেবা প্রত্যাশীরা কাজ না করেই ফিরে যাচ্ছেন।
গুলিস্তান এলাকায় দুর্ভোগ-ভোগান্তি ॥ ব্লকেড কর্মসূচির ফলে রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত গুলিস্তান এলাকায় সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
সরেজমিনে নগর ভবন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, সোমবার বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা গুলিস্তান মাজারের সামনে অবস্থান নিয়ে সড়ক আটকে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এর ফলে রাজধানীর বংশাল ও পল্টনমুখী সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে গুলিস্তান ও আশপাশের এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এতে অনেক যাত্রী হেঁটে গন্তব্যে যায়।

এই কর্মসূচিকে ঘিরে দুর্ভোগে পড়েন মানুষ। সাধারণ যাত্রীরা জানান, এখন প্রতিদিনই কোনো না কোনো আন্দোলনে দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারকে আন্তরিকভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে এবং যারা আন্দোলনে নামছেন, তাদেরও সংযত হতে হবে।
সকাল থেকে বিক্ষোভকারীরা ডিএসসিসি আওতাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে প্রথমে গুলিস্তান মাজারের সামনে এবং নগরভবনের সামনে জড়ো হয়। পরে ইশরাকের শপথ নিতে বিলম্ব কেন উল্লেখ করে এর প্রতিবাদ জানান তারা। এ সময় ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’; ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’; ‘অবিলম্বে ইশরাক হোসেনের শপথ চাই’; ‘দফা এক, দাবি এক, আসিফের পদত্যাগ’; ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে দিতে থাকে বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে ইশরাকপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নগরভবনের মূল ফটক এবং অন্যান্য বিভাগের গেটে তালা লাগিয়ে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। ফলে নগরভবনে প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যেতে দেখা গেছে সেবা প্রত্যাশীদের। এ সময় বিক্ষোভকারীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত নগরভবনের সামনে আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
গণতন্ত্রের সঙ্গে এক চুল ছাড় হবে না- ইশরাক হোসেন ॥ গণতন্ত্রের সঙ্গে, জনগণের ভোটার অধিকারের সঙ্গে এক চুল ছাড় হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। ইশরাক হোসেন  সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন। ফেসবুক পোস্টে ইশরাক হোসেন বলেন, মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য।
তিনি বলেন, অনেক সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি, পিতা-মাতা তুলে গালিগালাজও চুপ করে সহ্য করে গেছি। কারণ একটাই, এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটের অধিকারের স্বার্থে। সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে তা ক্লিন-কাট বুঝিয়ে দিল।
বিএনপির এ নেতা বলেন, কোনো কথা চলবে না, যারা নিরপেক্ষতা শুধু বিসর্জন দিয়েছে নয়, বরং একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। এরা হাসিনার মতোই বিচারকদের হুমকি দিয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে চ্যালেঞ্জ করছে। উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করেছে এবং আমলাতন্ত্র হাসিনার দোসরদের সঙ্গে নিয়ে লম্বা কুচক্র পরিকল্পনা করছে। একদিন এদের সবার নাম-পরিচয় প্রকাশ পাবে।

হাসিনারেও বলছিলাম কবরটা ঠিক করাই আছে আল্লাহর হুকুম থাকলে সেখানেই হবে ইনশাআল্লাহ। লড়াই শেষ হয় নাই। হয় দাবি আদায় করব না হয় আল্লাহর নির্ধারিত স্থানে মাটির নিচে শায়িত হব। গণতন্ত্রের সঙ্গে, জনগণের ভোটার অধিকারের সঙ্গে এক চুল ছাড় হবে না।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিতর্কিত নির্বাচন হয়। তাতে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ইশরাকের শপথ অনুষ্ঠান এখনো হয়নি।

×