ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ভাঙনরোধে গাফিলতির অভিযোগ, তিস্তাপাড়ে মানববন্ধন

অসময়ে তিস্তার চরে হাঁটুপানি, তলিয়ে গেছে বাদাম

তাহমিন হক ববী, নীলফামারী

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ১৮ মে ২০২৫

অসময়ে তিস্তার চরে হাঁটুপানি, তলিয়ে গেছে বাদাম

অসময়ে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে

অসময়ে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এতে চর এলাকার খরিপ-১ মৌসুমের বাদামসহ বিভিন্ন ফসল হাঁটুপানিতে ডুবেছে। বিশেষ করে বাদামের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শনিবার চরবাসী জানায়, গত তিনদিন ধরে হা্টুঁপানিতে ডুবে আছে চরাঞ্চলে কৃষকের উঠতি ফসল। 
এদিকে ভাঙনরোধের নামে বালু উত্তোলনের কারণে তীর ভেঙে ফসল নষ্ট ও বাঁধ-বাণিজ্যে সরকারি টাকা লুটপাট হচ্ছে অভিযোগ করে এর প্রতিবাদে তিস্তাপাড়ে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশপুকুর এলাকায় নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা আন্দোলন করছেন। 
অসময়ে তিস্তার পানি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে চরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানায় তিস্তার ডালিয়া ব্যারেজের উজানে ভারত এবং বাংলাদেশ অংশে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পানি বেড়েছে। এরই মধ্যে নীলফামারীর ডালিয়ার দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়ায় নি¤œাঞ্চলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। 
তবে ডালিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে, গত ৪ দিনে নদীতে একশ’ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। এখনও পানি বিপৎসীমার (৫২.১৫) শনিবার (১৭ মে) দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার নিচে আছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডালিয়ায় ৫১ ও কাউনিয়ায় ১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১৪৩ মিলিমিটার। এর মধ্যে কাউনিয়া পয়েন্টে ৯৯ মিলিমিটার ও ডালিয়া পয়েন্টে ৪৪ মিলিমিটার। 
সূত্র জানায় উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে। পানির চাপে কাউনিয়া পয়েন্টে নদীর পানি পরিমাপের গেজ ভেসে যায়। ফলে, সেখানে নতুনভাবে গেজ স্থাপন করেছে পাউবো। এদিকে তিস্তা নদীর কাউনিয়া উপজেলার তালুক সাহাবাজ চর, ঢুষমারা নিচু চরপীরগাছা উপজেলার নিচু শিবদেব এলাকার বাদাম চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে।

তিস্তার পানিতে তলিয়ে আছে বাদাম ক্ষেত। এ নিয়ে বাদাম চাষিরা স্থানীয় ভাষায় বলেন, ‘বাদাম নিয়্যা খুব মসিবতে (কষ্টে) আছি। চরের সোগ (সব) বাদাম নষ্ট হয়্যা গেইছে। এ্যলাও পানির দেড়-দুই ফুট নিচোত বাদাম আছে। কিছু বাদাম তুলবার পারছি কিন্তু শুকাবার (শুকানো) পারছি না। অসময়ে তিস্তার পানিত হামার অনেক লোকসান করি দেলে।’ 
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতিবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারী, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলের নিচু এলাকাগুলোতে পানি ঢুকে পড়ে বাদাম ক্ষেতের অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করেছে। শুধু বাদাম নয়, বাদামের সঙ্গে চরের জমিতে থাকা মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতগুলোও তলিয়ে রয়েছে বলে জানান চরবাসীরা। 
রংপুর কৃষি অঞ্চল অফিস সূত্র জানায় খরিপ-১ (চলতি মৌসুম) তিস্তা নদীর চর এলাকাসহ ৫ জেলায় বাদাম চাষ হয় ৫ হাজার ২২৯ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫৫ হেক্টর কম আবাদ হয়। খরিপ-১ মৌসুমে লালমনিরহাটে ১ হাজার ৮৭০ হেক্টরে, রংপুরে ১ হাজার ৩৯০ হেক্টরে, নীলফামারীতে ৯৭৯ হেক্টরে, কুড়িগ্রামে ৯১২ হেক্টরে ও গাইবান্ধা জেলায় ৭৯ হেক্টরে বাদাম চাষ হয়।
এর আগে চলতি বছরের রবি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৭৯ হেক্টরে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৯২৮ মেট্রিকটন বাদাম উৎপাদন হয়েছিল বলে জানান, রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণের উপপরিচালক আফজাল হোসেন। 
তিস্তাপাড়ে মানববন্ধন : বালু উত্তোলনের কারণে তীর ভেঙে ফসল নষ্ট হওয়ার প্রতিবাদে বাইশপুকুর এলাকায় নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। শুক্রবার সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, শুরু থেকেই বাঁধ নির্মাণের কাজে গাফিলতি ছিল। দুই মাস আগে কাজ শুরু হয়। এখনো প্রকল্পের ২০ ভাগ কাজ শেষ হয়নি। অথচ ২৫ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

ঠিকাদারের গাফিলতি ও ধীরগতির কাজের কারণে তীরের বাসিন্দারা নিয়মিত ভাঙনের কবলে পড়ছে। এ বিষয়ে ডালিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, কাজ দরপত্র অনুযায়ী হচ্ছে। বরাদ্দ পেতে দেরি হওয়ায় কাজ দেরিতে শুরু হয়েছে। এ ছাড়া উজানের ঢলে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে। 
সৈয়দপুরে ২১ বসতঘর পুড়ে ছাই ॥ নীলফামারীর সৈয়দপুরে ভয়াবহ আগুনে ২১টি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের উত্তর সোনাখুলি হিন্দুপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে আসবাবপত্র, নগদ টাকা, ধান-চালসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। 
এলাকাবাসী এবং স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে ওই এলাকার পাতাসী বেগমের বাড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা আশেপাশের বসতঘরে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তরা ইপিজেড ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার খুরশীদ আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শট-সার্কিট থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।

×