
লালমাটিয়ার ইলিউশনস গ্যালারিতে চলমান পঁচিশে বৈশাখ শীর্ষক চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর ছবি দেখছেন দর্শনার্থীরা
বিগত সপ্তাহজুড়ে নানা ঘটনার ঘনঘটায় উত্তাল হয়েছে শহর ঢাকা। রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের দাবি আদায়ের সূত্রে উত্তপ্ত হয়েছে রাজপথ। দিন থেকে শুরু হয়ে রাতব্যাপী চলেছে অধিকার আদায়ের নানামুখী আন্দোলন। ফলশ্রুতিতে প্রায়ই অবরুদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন সড়ক। সৃষ্টি হয়েছে তুমুল যানজট। থেমে গেছে গাড়ির চাকা। শহরবাসীকে গন্তব্যে পৌঁছুতে পোহাতে হয়েছে ভোগান্তি।
এমন বাস্তবতায় অনেকেই দীর্ঘ পথ হেঁটে অফিস কিংবা ঘরে ফিরেছেন। এ বিড়ম্বনার উল্টোপিঠে গ্রীষ্মের গরম বাড়িয়েছে ভোগান্তির মাত্রা। কাঠফাটা রোদের দাপটে যান্ত্রিক নগরীতে যেন বয়ে গেছে আগুনের হলকা। কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনে দেখতে হয়েছে প্রকৃতির রুদ্র রূপ। বিশেষ করে প্যাডেলচালিত রিক্সাচালক থেকে শ্রমিক, মজুরসহ খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কষ্টটাই বেশি হয়েছে। ঘামে ভেজা শরীর নিয়ে জীবিকার তাগিদে তারা পথে নেমেছেন।
তাপপ্রবাহকে উপেক্ষা করেই আপন কাজটি সম্পন্ন করেছেন। পরিবারের সদস্যদের চাহিদা মেটাতে কিংবা মুখের হাসিটি ধরে রাখতে খরতাপকে পাশ কাটিয়ে চালিয়ে গেছেন জীবনযুদ্ধ। তবে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার তুলনামূলকভাবে ঢাকার আবহাওয়া ছিল সহনীয়। এদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টির কারণে সহনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করেছে। চলাফেরায় স্বস্তি অনুভব করেছেন রাজধানীবাসী। সে সূত্রে এদিন বিকেল পর্যন্ত আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী তাপমাত্রা ছিল ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
প্রকৃতি যেমন এ শহরে ঝাঁঝালো রূপে আবির্ভূত হয় তেমনি আবার ¯িœগ্ধতাও ছড়িয়ে দেয়। গ্রীষ্মকালীন নানা রঙ ও বাহারি গড়নের ফুল স্মরণ করিয়ে দেয় সে কথা। তাই তো এ সময়ে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির নগরীতে চোখে পড়ছে নয়নজুড়ানো পুষ্পরাজি। গ্রীষ্মের ফোটা সে ফুলের সৌন্দর্যে চলতি পথে থেমে যাচ্ছে পথিক। চোখটি উঁচু করে তাকাচ্ছে সবুজ লতা-পাতায় বেষ্টিত বৃক্ষের পানে। সেসব গাছে ঝুলে থাকা ফুলগুলো ঝক্কি-ঝামেলার কথা ভুলিয়ে দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রশান্তির পরশ।
বিশেষ করে মানিক মিয়া এভিনিউ কিংবা সংসদ ভবন এলাকার চারপাশে এখন উঁকি দিচ্ছে লাল-হলুদ, নীল রঙের গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল। মুগ্ধ দৃষ্টিতে নগরবাসী ফিরে তাকাচ্ছে গাছে ঝুলে থাকা কৃষ্ণচূড়া-রাধাচূড়া, জারুল ফুলের দিকে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ইস্কাটন গার্ডেন রোডের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে থোকায় থোকায় ঝুলে আছে বাগান বিলাস, জারুলসহ নানা রঙের ফুলগুলি। ঢাকার ফুসফুসখ্যাত রমনা পার্কে ঢুঁ দিলে নজর কাড়ছে সোনালী রঙের আভাময় সোনালু ফুল।
রঙ ও সুবাসের বৈভবে কাছে টানছে কৃষ্ণচূড়া, কামিনী, জারুলসহ রকমারি পুষ্পগুচ্ছ। হাতিরঝিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরসহ শহর ঢাকার বিভিন্ন অলি-গলিতে সজীবতার ছোঁয়া মেলে দিয়েছে গ্রীষ্মের ফোটা ফুলসমূহ।
শিল্পীর ক্যানভাসে ‘পঁচিশে বৈশাখ’ ॥ শহর ঢাকার গ্যালারি বা প্রদর্শনালয়গুলো এখন দারুণ সরব। রাজধানীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা গ্যালারিগুলোয় চলছে একক বৈচিত্র্যময় বেশ কিছু প্রদর্শনী। এগুলোর বিশেষভাবে বলতে হয় লালমাটিয়ার গ্যালারি দ্য ইলিউশনসের কথা। রবীন্দ্রজয়ন্তী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে ‘পঁচিশে বৈশাখ’ শীর্ষক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে প্রদর্শনালয়টি।
প্রখ্যাত থেকে প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান ২৫ চিত্রকরের চিত্রিত চিত্রকর্মে সেজেছে এ শিল্পায়োজন। সেসব ছবিতে তারুণ্য থেকে বার্ধক্যকালীন সময়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেখা মেলে। জরলরং. অ্যাক্রেলিক ও মিশ্র মাধ্যমে আঁকা সেসব ছবিতে নানা অভিব্যক্তিতে মূর্ত হয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। রং-তুলির আঁচড়মাখা কোনো ক্যানভাসে ভাসছে রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন কিংবা কবিতার পঙ্ক্তিমালা।
বাঙালির যাপিত জীবনে রবীন্দ্রনাথের সুদূর বিস্তৃত প্রভাব ও অবয়বের মনে করিয়ে দেয় ছবিগুলো। সে কারণেই শহরের শিল্পরসিকরা আগ্রহভরে অবলোকন করছেন প্রদশনীটি। ইতোমধ্যে প্রদর্শনীর অনেকগুলো ছবি শিল্পসংগ্রাহকরা সংগ্রহও করেছেন।
এ প্রদর্শনীর ক্যানভাস রাঙানো ২৫ চিত্রশিল্পী হলেন- আব্দুল মান্নান, বীরেন সোম, জামাল আহমেদ, অভিজিৎ চৌধুরী, আল আখির সরকার, আলপ্তগীন তুষার, বিপ্লব চক্রবর্তী, ফায়জা আহমেদ, হারুন অর রশীদ টুটুল, হাসুরা আখতার রুমকি, কামাল উদ্দিন, কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, রফিকুল ইসলাম, সাবিদ ওসমান, এসএম ময়েজউদ্দীন, রঞ্জিত দাস, রতেœশ্বর সূত্রধর, শহীদ কাজী, সাইদা সুলতানা রানা, শাহানুর মামুন, শারমিন আক্তার লিনা, শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, শাকিলা খান চয়ন, সোহাগ পারভেজ ও সুমন ওয়াহিদ।
আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত শিল্পানুরাগীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ প্রদর্শনী। বিকেল তিনটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত খোলা থাকবে।