
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের এলডিডিপি প্রকল্পে কর্মরত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান প্রকৃতপক্ষে কোনো সরকারি পশু চিকিৎসক নন। তিনি ওই কার্যালয়ের একজন ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (অফিস সহায়ক)। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিজেকে পশু চিকিৎসক পরিচয়ে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। স্থানীয় হাট-বাজারের পশু ফার্মেসিগুলোর সঙ্গেও রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। অনেক সহজ-সরল খামারি তাঁর এই ছদ্মচিকিৎসা বুঝে উঠতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত তাঁর দেওয়া চিকিৎসায় একটি গরুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চন্দনপুর গ্রামে।
স্থানীয় কৃষক মো. রমজান আলী অভিযোগ করেন, গত ২৪ মার্চ সকালে তাঁর একটি গরু হালকা জ্বরে আক্রান্ত হলে তিনি প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের পরিচিত মুখ মেহেদী হাসানকে ডাকেন। মেহেদী প্রথমে একটি ইনজেকশন দেন, পরে জানান ওষুধটি সঠিকভাবে রগে প্রবেশ করেনি। এরপর আরেকটি ইনজেকশন দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই গরুর ঘাড় ফুলে ওঠে এবং বিকেলের মধ্যেই গরুটি মারা যায়। পরদিন ২৫ মার্চ মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন রমজান আলী। অভিযোগপত্রে তিনি বলেন, ‘আমি বাড়িতে ছিলাম না। আমার স্ত্রীকে ভুল বোঝিয়ে ইনজেকশন দিয়েছেন। পরে জানতে পারি, তিনি সরকারি ডাক্তারই নন। অথচ এলাকায় নিজেকে পশু চিকিৎসক পরিচয়ে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।’ তাঁর দাবি, গরুটির বাজারমূল্য প্রায় এক লাখ দশ হাজার টাকা।তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, বিষয়টি নতুন নয়, মেহেদী হাসান বহুদিন ধরেই চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। এলডিডিপি প্রকল্পের কর্মকর্তা হয়েও নিয়মিত মাঠপর্যায়ে গিয়ে গরু-ছাগলের চিকিৎসা দেন। তাঁর নম্বর প্রায় প্রতিটি গ্রামীণ খামারি ও পশুপালকের কাছে পৌঁছে গেছে। অফিস সহায়ক হয়েও পশু চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করার অভিযোগে ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। তাঁদের ভাষ্য, “এভাবে গরু মরছে, ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের, অথচ কেউ যেন দেখেও না দেখার ভান করছে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মেহেদী হাসান কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে মেঘনা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, “আমি ঘটনাটি তদন্ত করেছি। গরুটি ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ভুক্তভোগী ইউএনও স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। আমি স্যারকে এখনও বিষয়টি জানাইনি, তবে জানাব। আর অভিযুক্ত মেহেদী যেকোনো পশুকে ইনজেকশন পুশ করার যোগ্যতা রাখে।”
এলডিডিপি ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট কোনো প্রাণীকে চিকিৎসা দিতে পারেন কি-না, কিংবা এটি আইনগতভাবে বৈধ কি-না এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কুমিল্লা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার জানান, “আমি একটা মিটিংয়ে আছি। আপনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন, উনি আপনাকে সমাধান দেবেন।”
মেঘনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হ্যাপী দাস বলেন, “আমি প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জানিয়েছিলাম। সে আমাকে বলেছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও আমি তাকে এখনই আবার ফোন করছি বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য।”
তবে অভিযোগের প্রায় দেড়মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে-একজন সরকারি কর্মচারী হয়ে যদি এভাবে পশু চিকিৎসার নামে প্রতারণা করে থাকেন, তবে সাধারণ খামারিরা নিরাপত্তা পাবে কোথায়?
রাজু