ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

জেলায় ১০৮ ইটভাটার মধ্যে ৭৬টি অবৈধ, অভিযানেও ফল নেই

মনোয়ার হোসেন লিটন,কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১০:৩৫, ১৪ মে ২০২৫

জেলায় ১০৮ ইটভাটার মধ্যে ৭৬টি অবৈধ, অভিযানেও ফল নেই

ছবি:সংগৃহীত

কুড়িগ্রামে বন্ধ করা যাচ্ছে না অনুমোদনহীন ৭৬টি ইট ভাটা।পরিবেশগত ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স ছাড়া কিভাবে   এই ইটভাটা চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন জনমনে। এসব ইটভাটার কারণে  নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, জলজ প্রাণী ও ফসল।

উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নে ৩ বৎসর আগে রাস্তার সাথে ফসলী জমিতে নির্মিত হয়েছে ' মেসার্স এম আর বি ইকো ব্রিকস'।ছাড়পত্রহীন এই ভাটার শুরুতেই পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে ধ্বংস করে দেয় অবকাঠামো। তারপরও বন্ধ হয়নি কার্যক্রম। পরের বছর অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হয় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

এবছরে শুরুতেই পরিবেশ অধিদপ্তর ও উলিপুর উপজেলা প্রশাসন সেই ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে  ৫ লক্ষ টাকা এবং ভাটাটি বন্ধে দেওয়া হয় নির্দেশ। তারপরে সমারোহে চলছে এই ইটভাটা। গত ১০ মে শনিবার গিয়ে দেখা যায়,  বিশাল এলাকাজুড়ে চলছে কার্যক্রম।    এসব ভাটার ধোঁয়ায় কারনে কমছে ফসলি জমি,  বাড়ছে রোগবালাই।

তবে পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, ইটভাটাটি হাইকোর্টে পরিবেশের ছাড়পত্র পাবার জন্য রীট মামলা দায়ের করে।এর পেক্ষিতে আদালত আইনানুযায়ী ভাটাটির    ছাড়পত্রের আবেদন দ্রুত সময়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে নিস্পত্তি করতে বলে।

এই এলাকার বাসিন্দা আমজাদ বলেন, 'এই ভাটাটি  সম্পন্ন অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে। এর আশেপাশের সবগুলো ফসলি জমি। এই ভাটাটি হওয়ার কারণে এখানকার ফসল উৎপাদন অনেক কমে গেছে। তাছাড়া এই ভাটার ধোয়ার কারণে মানুষের রোগ বালাই অনেক বেড়ে গেছে।'

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়ন ও রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশা ইউনিয়নে কিছু অংশে অবস্থিত গর্ভের দোলা।এই দোলা একসময়ে ছিল  মাছ, জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য এবং ফসল উৎপাদনের অন্যতম  যায়গা । এখানে একে- একে গড়ে উঠেছে বৈধ- অবৈধ  ৭টি ইট ভাটা।এসব ইট ভাটার কারণে  মাছ নেই, ধংঃশ্ব হয়েছে জলজ প্রাণী,  উৎপাদন হচ্ছে ব্যাহত।এছাড়াও ইট প্রস্তুতের জন্য  জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নিয়ে যাওয়ায় ওই জমিতে কমপক্ষে ৫ বছর হচ্ছে না কোন উৎপাদন। 

এই এলাকার কৃষক রাসেল মিয়া বলেন, আমাদের এই দোলায় ইট ভাটা গুলির কারনে জমির উৎপাদন অনেক কমে গেছে। এছাড়াও ভাটার গ্যাসের কারনে মাঝে মাঝে ধান পুড়ে যায়। ভাটার মালিকরা ক্ষতিপূরণ দিতে চাইলেও দেয় না।আমরা এই ভাটা গুলির অপসারণ চাই।

পরিসংখ্যান বলছে, জেলার  ১০৮ টি ইট ভাটার মধ্যে ৭৬ অনুমোদনহীন। ৯ উপজেলায় অনুমোদনহীন এসব ইট ভাটার মধ্যে, কুড়িগ্রাম সদরে -১৩ টি,ভুরুঙ্গামারীতে - ৫ টি,নাগেশ্বরীতে - ১৫  টি ,রাজারহাটে - ১ টি,উলিপুরে - ১৭ টি,চিলমারীতে - ৫ টি,রৌমারীতে - ৮ টি,রাজিবপুরে - ৬ টি ও ফুলবাড়িতে - ৬ টি ইট ভাটা।

কোনরকম কাগজপত্র ছাড়া ইটভাটা পরিচালনা করলেও কোনরূপ মন্তব্য করতে  রাজি নন এসব ভাটার মালিকেরা।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর  মীর্জা মোঃ  নাসির উদ্দিন বলেন, ইটভাটা গুলি ইট প্রস্তুতের জন্য ব্যবহার হয় ফসলি জমির  উপরিভাগ। এই ফসলি জামির উপরিভাগ ব্যবহার কারণে উৎপাদন দিন দিন কমে যাচ্ছে।ওই জমিতে মাটির স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগে।

অবৈধ ইটভাটা বন্ধে  নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে পরিবেশ অধিদপ্তর। জানুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত পরিবেশ অধিদপ্তর  ৩৫ টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছে। জরিমানা করেছে ৩২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ৩৭ টি ইটভাটা কার্যক্রম বন্ধ  করে দিয়েছে। তবে বন্ধের নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ ইট ভাটা তাদের কার্যক্রম  বন্ধ করেনি।

কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোঃ রেজাউল করিম বলেন, অবৈধ ইটভাটা  বন্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় আমাদের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।


 

আলীম

×