ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৪ মে ২০২৫, ৩১ বৈশাখ ১৪৩২

সোনারগাঁয়ে পশু হাসপাতালে

কম্পাউন্ডারই চিকিৎসক! ভিজিট ১৫০০ টাকা

শাহ জালাল, সোনারগাঁও সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৫, ১৪ মে ২০২৫

কম্পাউন্ডারই চিকিৎসক! ভিজিট ১৫০০ টাকা

ছবি : জনকণ্ঠ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা পশু হাসপাতালের কম্পাউন্ডার রাজীব চন্দ্র দাস। যার দায়িত্ব হাসপাতালে ডিউটি করা এবং চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অসুস্থ পশুকে ওষুধ প্রয়োগ করা। এছাড়া প্রাথমিক পরামর্শ দিতে পারবেন বলে জানা গেছে।

কিন্তু কম্পাউন্ডার রাজীব চন্দ্র দাস তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন না করে টাকার বিনিময়ে পশুর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। হাসপাতালে অফিস চলাকালে কোনো ধরণের টাকা নেওয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ এ কাজ করে যাচ্ছেন। যে কেউ পশু নিয়ে হাসপাতালে আসলেই তার কাছে ছুটে যান রাজীব চন্দ্র দাস।

চুক্তির মাধ্যমে টাকা নিয়ে শুরু করেন পশুর চিকিৎসা। অনেক ক্ষেত্রে ইনজেকশন না লাগলেও তিনি টাকা কামানোর উদ্দেশ্যে পশুকে ইনজেকশন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র বা পরামর্শ ছাড়াই নিজেই সরকারি লোগো সম্বলিত প্যাডে ব্যবস্থাপত্র লিখে দিচ্ছেন।

এই কাজ করতে গিয়ে পার্শ্ববর্তী উপজেলা মেঘনা নলচরের নিজামের দুটি গরু ও চালিভাঙার এলাকার জিতুর তিনটি গরু তার অপচিকিৎসায় মারা যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

পৌরসভার রোকেয়া নামের একজনের ছাগলও তার অপচিকিৎসায় মারা যায়। এজন্য তিনি ক্ষতিপূরণ দেন।

শুধু তাই নয়, অফিসের বাইরে চিকিৎসা দেওয়া তো দূরের কথা, অফিসের বাইরে যাওয়ারও নিয়ম নেই তার। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তিনি যেখান থেকেই খবর পান, সেখানেই চিকিৎসা দিতে ছুটে যান। বিনিময়ে হাতিয়ে নেন মোটা অঙ্কের টাকা। এসবের পেছনে তার একমাত্র উদ্দেশ্য টাকা উপার্জন।

এ ধরণের অনিয়মের প্রমাণ পেয়ে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কম্পাউন্ডার রাজীব চন্দ্র দাসকে শোকজ করার নির্দেশ দেন। নির্দেশ পাওয়ার পর তৎকালীন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইউসুফ হাবিব তাকে শোকজ দিলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি।

হাসপাতালে পশুর চিকিৎসা নিতে গিয়ে কম্পাউন্ডার রাজীব চন্দ্র দাসের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন জৈনপুর গ্রামের শাহেদ আলী। তার কাছ থেকে চিকিৎসা বাবদ ৩৫ হাজার টাকার ওষুধ দেওয়া হয়। তারপরও পশুর রোগ ভালো হয়নি। পশু দেখা বাবদ তার কাছ থেকে ১৫০০ টাকা ভিজিট নেওয়া হয়।

চিকিৎসা দিয়ে লোক বুঝে কারও থেকে ৫০০, কারও ৩০০, কারও ১০০০, আবার কারও থেকে ১৫০০ বা ২০০০ টাকা পর্যন্ত ভিজিট নেন রাজীব চন্দ্র দাস। এছাড়া প্রতিদিন তার অফিসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ঘুষের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কোম্পানির ওষুধ লিখে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রাজীব চন্দ্র দাস বলেন, “আমি প্যাড ব্যবহার করছি—এটা সত্য। তবে কোথাও ‘ডাক্তার’ উল্লেখ করিনি। ওষুধের টাকা নিয়েছি, কোনো ভিজিট নিইনি। আমার নিয়োগ কম্পাউন্ডার পদে হলেও পরে প্রমোশন পেয়ে উপ-সহকারী হয়েছি।”

সোনারগাঁ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোছা. নইফা বেগম বলেন, “কম্পাউন্ডার রাজীব চন্দ্র দাস প্রাথমিক পরামর্শ দিতে পারেন। কিন্তু সরকারি প্যাড ব্যবহার করে চিকিৎসা দেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সা/ই

×