
দায়সারাভাবে বালু তুলে নদীর তীরেই রাখা হয়েছে
শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্য বৃদ্ধি, জলাবদ্ধতা দূর করা, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমানোসহ কৃষিকাজে নদীর পানি ব্যবহারের লক্ষ্যে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার সাতনদী ও একটি খাল খনন করা হয়েছিল ৪ অর্থ বছরে। এক থেকে দুই বছরেই সবগুলো নদী ফিরে এসেছে পূর্বের দশায়। এসব নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বাড়ায় পানির স্তর নিচে চলে যাচ্ছে। ফলে খনন করা নদীতে পানি থাকছে না।
নদীতীরের বাসিন্দারা জানান, নদীগুলো নামমাত্র খনন করা হয়েছে। খননযন্ত্র দিয়ে দায়সারাভাবে নদীর বালু তুলে নদীর তীরেই রাখা হয়েছে। সেই বালু আবার নদীতে পড়েছে। আবার কিছু বালি বিক্রি এবং চুরি হওয়ায় নদীতীরের বন্যাকবলিত এলাকায় আর বাঁধ নির্মাণ হয়নি। বর্ষার সময় তাদের দুর্ভোগ রয়েছে আগের মতোই। খননের আগে পানির প্রবাহ যা ছিল এখন তা নেই।
তারা জানান, খননের পর কর্তৃপক্ষ নদীর প্রবাহ ঠিকঠাক চলছে কি না এবং নদীর তীরে প্রয়োজনে বালু রক্ষায় কোনো তদারক করেনি। নদী খননের আগে যা ছিল, পরে উল্টো আপানি কমেছে। নদী খননে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু টাকার অপচয় হয়েছে। এতে নদীতীরের মানুষের লাভ না হলেও প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের লাভ হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার ফারুক মোহাম্মদ নাসের জানান, নদী খনন, মাটি ভরাট, ব্লক নির্মাণে ঘাপলা হয়েছে। এমন কিছু লোকজন জড়িত তাদের নিয়ে কিছু বলতে পারি না।
ঠাকুরগাঁও সুজন-এর সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বলেন, বর্তমানে জেলার বেশিরভাগ নদী নাব্য হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু সরকারের নদী খননের উদ্যোগটি পরিকল্পিতভাবে গ্রহণ না করায় ফলপ্রসূ হচ্ছে না এবং রয়েছে অব্যবস্থাপনা। সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। নদীপাড় ঘেঁষে বালি রাখায় বালি আবার নদীতে পড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম যাকারিয়া বলেন, জেলার ভরাট হয়ে যাওয়া নদীগুলো খননের উদ্যোগ নিয়ে তদারকি করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পুনরায় এগুলো ড্রেজিংয়ের আওতায় আনা হবে। এ কাজে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঠাকুরগাঁও এলাকার নদী ৬০ মিটার উঁচুতে থাকায় পানির প্রবাহ ধরে রাখা যাচ্ছে না। তবে জেলার চারটি সম্মিলিত নদীতে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, জানান জেলার এ কর্মকর্তা।