ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ছয় গ্রাম মানুষের ভরসা ৩০ বছরের ভাঙা ব্রিজ:চলাচলে ভোগান্তি

শামীম রায়হান,নিজস্ব সংবাদদাতা,দাউদকান্দ

প্রকাশিত: ১৩:২৮, ১২ মে ২০২৫

ছয় গ্রাম মানুষের ভরসা ৩০ বছরের ভাঙা ব্রিজ:চলাচলে ভোগান্তি

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মুকুন্দি গ্রামে প্রায় ৩০ বছর আগে ব্রিজ নির্মাণ করা হলেও ভাঙা ব্রিজ দিয়ে চলাচলে‌ ‌ভোগান্তি ছয় গ্রাম মানুষের। 

২০১৫ সালে ব্রিজটির দুটি অংশ ধসে পড়ে। এ ছাড়া ভেঙে গেছে ব্রিজের রেলিং। ফাটল ধরেছে পিলারে। গত ১০ বছরেও ব্রিজটির সংস্কার করেনি কোন জনপ্রিতিনিধিই। এতে ব্রিজটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অনেক আগেই । এ সময়ে নতুন ব্রিজ নির্মাণেরও কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় উপজেলা এলজিইডি। তাই ঝুঁকি নিয়েই দৌলতপুর ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ব্রিজটি দিয়ে যাতায়াত করেন প্রতিনিয়ত। এতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এ ভাঙা ব্রিজ দিয়ে উপজেলার দৌলতপুর  ইউনিয়নের কাউয়াদি, ভবানীপুর, তুলাতলী, সাধারদিয়া, নতুনবাজারসহ ছয় গ্রামের বাসিন্দারা যাতায়াত করেন। ব্রিজটি দিয়ে আশপাশের বেশ কয়েকটি স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভাঙা ব্রিজটি দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। 

স্থানীয় এলাকার জাকির মিয়া বলেন,‘আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অন্তত ৩০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করে। আমরা সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি- কখন ব্রিজটি ভেঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে! ব্রিজটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’ 

মুকুন্দি গ্রামের বাসিন্দা মোশাররফ পাটোয়ারী বলেন, ‘এ ব্রিজ দিয়ে কৃষকরা ঝুঁকি নিয়ে বাজারে তাদের পণ্য আনা-নেওয়া করেন। বর্তমানে ব্রিজটি দিয়ে হাঁটাও কষ্টসাধ্য। পাঁচ বছর পর পর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসলে  সম্ভাব্য চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ব্রিজটি সংস্কার অথবা পুনর্নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত কেউ সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। এতে আমাদের গ্রামসহ ও আশপাশের ৬টি গ্রামের বাসিন্দাদের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে প্রতিদিন।’ 

ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা আসাদ মিয়া বলেন, ‘ব্রিজটি সংস্কার বা নতুন ব্রিজ নির্মাণ না করায় আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে ব্রিজটি দ্রুত পুনর্নির্মাণের আহ্বান জানাচ্ছি। 

সাধারদিয়া গ্রামের ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক আলাউদ্দিন মিয়া বলেন, ‘এ সড়কে নিয়মিত যাত্রীসহ মালামাল আনা-নেওয়া করতাম। ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যাত্রীদেরও কষ্ট বেড়েছে।’ 

কৃষক জায়েদ আলী বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর আগে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়। এরপর আর কোনো  সংস্কার করা হয়নি। ২০১৫ সালের দিকে ব্রিজটির ওপরের অংশের আস্তরণ খসে পড়া শুরু হয়। গ্রামবাসী মিলে একবার মসজিদের দানের টাকা দিয়ে সংস্কার করেছিলাম।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক বলেন, ‘ব্রিজটি দিয়ে আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। অনেক দিন ধরে ব্রিজটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। আমরাও শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয়ে থাকি। যেকোনো সময় একটি বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ব্রিজটি পুনর্নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে অনুরোধ করছি।’ 

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদ হাসান বলেন, ‘ব্রিজটি সম্পর্কে আমাকে আগে কেউ কিছু জানাননি। সম্প্রতি আমি ব্রিজটি সম্পর্কে জেনেছি। এটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ব্রিজটি পুনরায় নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আলাপ আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’

মুমু

×