ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের দৃষ্টিভঙ্গির পুনর্জাগরণ

খাল খনন মহাপরিকল্পনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা: কবীর আহমেদ ভূঁইয়া

মো:সাইফুল ইসলাম, আখাউড়া।

প্রকাশিত: ১২:৩১, ১০ মে ২০২৫; আপডেট: ১২:৩৩, ১০ মে ২০২৫

খাল খনন মহাপরিকল্পনায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কৃষি বিপ্লবের সম্ভাবনা: কবীর আহমেদ ভূঁইয়া

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কৃষিনির্ভর উন্নয়ন দর্শনের আলোকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খাল পুনঃখনন ও আধুনিক জলসম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটি বিশাল কর্মসূচি হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। লক্ষ্য—জেলার কৃষি উৎপাদন বাড়ানো, সেচ কার্যক্রম উন্নত করা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সদস্য ও ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান, আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “আমরা যদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আসি, তাহলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৫টি গুরুত্বপূর্ণ খাল পুনঃখননের মাধ্যমে পানির প্রবাহ পুনঃস্থাপন ও কৃষি উৎপাদনের গতি ফেরানো হবে।”

জেলার কৃষির চিত্র: সম্ভাবনা ও সংকট :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোট আয়তন ১,৮৮১.২০ বর্গ কিলোমিটার। জেলার আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ প্রায় ১,৮০,০০০ হেক্টর, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ সেচনির্ভর। তবে বহু খাল, বিল ও জলাশয় দখল, পলি পড়া ও অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (BARC) ২০২৩ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জেলায় ধানের গড় উৎপাদন হেক্টরপ্রতি ৪.৬ মেট্রিক টন। সঠিক সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা থাকলে উৎপাদন ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর, বিজয়নগর, কসবা, আখাউড়া, নাসিরনগর, সরাইলসহ নয়টি উপজেলায় বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে কৃষকের জীবন ও জীবিকা ব্যাহত হয়।

খাল ও নদী: সম্ভাবনার ধমনী :

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় রয়েছে একাধিক ছোট-বড় নদী ও খাল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হলো—তিতাস, মেঘনা, বিজনা, সিনাই, সালদা, কালিয়ারা, বুড়ি ইত্যাদি। এছাড়া রাজার খাল, সাঙ্গুর খালসহ বহু খাল এখন পলি ও দখলে বন্ধ হয়ে আছে।

আশুগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে ১টি বড় নদী (মেঘনা), ৩১টি বিল ও অসংখ্য মৌসুমি প্লাবনভূমি। জেলার বিভিন্ন খাল পুনঃখননের মাধ্যমে পানি প্রবাহ, সেচ সুবিধা এবং মাছ চাষের নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হতে পারে।

মাছ চাষ ও জলজ সম্পদ :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাছ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। জেলার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী:

  • বেসরকারি মাছের খামার: ২৪৬টি
  • মোট আয়তন: ৪০৬.১৪ হেক্টর
  • মাছ উৎপাদন: ৪,৭২৫.৪২ মেট্রিক টন


তিতাস নদীতে বর্তমানে প্রায় ৮৩টি মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়, যার মধ্যে ভারতের আগরতলা থেকে একটি দূষিত বর্জ্যবাহী কালো পানি তিতাস নদীতে মিশার কারণে ১৯টি প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে।

পুনরুজ্জীবিত হচ্ছে জিয়ার উন্নয়ন দর্শন :

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সারা দেশে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন করা হয়েছিল। এতে সেচ, মৎস্য, পরিবেশ এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিপুল ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্যার  বিশ্বাস করতেন, গ্রামীণ উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি কৃষি ও পানি। আমরা সেই দর্শনকে আধুনিক প্রযুক্তির আলোকে বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে একটি কৃষি-অর্থনীতিনির্ভর মডেল জেলায় রূপান্তর করতে চাই।”

দশ বছর মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা :

এই কর্মসূচি জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG-6: নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন, SDG-2: ক্ষুধামুক্তি ও খাদ্য নিরাপত্তা)-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় রয়েছে:

  • খাল পুনঃখনন ও পলি অপসারণ।
  • খালপাড়ে বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙন প্রতিরোধ।
  • খালকেন্দ্রিক মাছ চাষ ও বৃক্ষরোপণ।
  • স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ।
  • আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতায় ক্লাইমেট-অ্যাডাপটিভ (climate-adaptive) মডেল বাস্তবায়ন।
  •  

বিশ্বব্যাংক ও FAO-এর একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলে ক্ষুদ্র সেচ ব্যবস্থা ও খালপথ বড় বাঁধ প্রকল্পের চেয়ে অধিক টেকসই ও পরিবেশবান্ধব।

কৃষির বাইরেও রূপান্তরের দৃষ্টান্ত :

এই কর্মসূচি কেবল কৃষি নয়, পরিবেশ, কর্মসংস্থান ও জলবায়ু অভিযোজনেও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

কবীর আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, “আমরা একটি ব্যালান্সড রুরাল ইকোনমি গড়তে চাই, যেখানে পানি, মানুষ ও প্রকৃতি সমন্বয় করে চলবে। এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিতে আমরা প্রস্তুত।”

নুসরাত

×