ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

দুর্নীতি করে কোটিপতি ইউপি চেয়ারম্যান, রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে

নিজস্ব সংবাদদাতা বাকেরগঞ্জ বরিশাল।

প্রকাশিত: ১২:২৭, ৫ নভেম্বর ২০২৪

দুর্নীতি করে কোটিপতি ইউপি চেয়ারম্যান,  রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাহিরে

ইউপি চেয়ারম্যান বশির সিকদার

 বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগ নেতা রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: বশির উদ্দিন সিকদার আওয়ামী লীগের আমলে একাধিকবার নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দলীয় প্রভাব দেখিয়ে   নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বরাদ্দ টিআর, কাবিখা, এডিপি, এলজিএসপি, উন্নয়ন সহায়তা তহবিল, অতিদরিদ্রের কর্মসূচি, ইজিপিপি প্রকল্পের কাজে অনিয়ম দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। বালু মহলের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন রকমের অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের নেতা ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সিকদারের বিরুদ্ধে। 

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভুক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছে তার বিরুদ্ধে।  সাম্প্রতিক সময়ে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের আলী আকবর হাওলাদারের পুত্র আমিরুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যান বশিরের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা করলে তিনি আত্মগোপনে যান। যাহার মামলা নম্বর সি আর ৫৯০/২৪।

রঙ্গশ্রী ইউনিয়নে গত ১৫ বছর ধরে সন্ত্রাস ও মাদকের নৈরাজ্য গড়ে তুলে ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন সিকদার। ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন। বাকেরগঞ্জ সদর রোড প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় একটি মার্কেট নির্মাণ করেছেন। নিজের বাড়িতেও গড়ে তুলেছেন কোটি টাকা ব্যয় তিন তলা একটি বাসভবন। 

অভিযোগ রয়েছে, ইউনিয়নে অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচি ইজিপিপির কাজে অনিয়ম করে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন চেয়ারম্যান বশির সিকদার। চল্লিশ দিনের প্রকল্পে ৩০-৩৫ জন লোক কাজ করার নিয়ম থাকলেও কয়েক বছর যাবত ১০-১২ জন লোক দিয়ে নামে মাত্র কাজ করিয়ে শ্রমিকদের অনেকের মোবাইল একাউন্ট চেয়ারম্যান বাদ দিয়ে তাদের নিজস্ব নাম্বারে একাউন্ট করে দিয়েছে। একাউন্ট পরিবর্তন করে চেয়ারম্যান টাকা আত্মসাৎ করেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগে আরো জানা যায়, সরকারি সেবা দিতেও ওই চেয়ারম্যান অবৈধভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে উত্তরাধিকার সনদ দিতে তার নির্দেশে ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করা হয়। জন্ম নিবন্ধন করতে সরকারি ফি ২৫/৫০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। গ্রাম আদালতে বিচার পেতে ১০ থেকে ২০ টাকা সরকার নির্ধারিত ফির পরিবর্তে হাজারটাকা আদায় করেন। এসব অনিয়ম করে ওই চেয়ারম্যান গত ৭ বছরে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্যামপুর মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি দায়িত্বে থেকে আয়া ও নাইটগার্ড পদে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে  চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের আমলে রঙ্গশ্রী মাস‌উদপুর কাদেরিয়া দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন রঙ্গশ্রী ইউপি চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন। তিনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে তখন টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসার অন্য ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের কাছে তথ্য গোপন করে মো: সাগর নামের এক ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য গোপন করে জন্ম নিবন্ধনে মোঃ শামীম হাওলাদার ও বয়স দুই বছর কমিয়ে দিয়ে ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী পদে চাকরি দেন তিনি। সম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি লিখিত অভিযোগ হওয়ার পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তদন্ত করছেন। 

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, আউলিয়াপুর গ্রামের মোঃ দুলাল হাওলাদার পটুয়াখালী সিভিল সার্জন অফিসে এ্যাম্বুলেন্সের চালক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর তার চাকুরীর পেনশনের টাকা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেতে স্ত্রী শামিমা বেগম ২০২০ সালের ৪ জুন রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত একটি ওয়ারিশ সনদ গ্রহন করেন। যেখানে তিনিসহ তার একমাত্র পুত্র মোঃ সুমন হাওলাদার, তিন কন্যা রোমানা আক্তার, ইসরাত জাহান সুমনা ও নুসরাত জাহান লিজাকে ওয়ারিশ দেখানো হয়।

প্রথম ওয়ারিস সনদপত্র দেওয়ার কয়েক মাস পরেই ২০২০ সালের ৬ আগস্ট ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ বসির উদ্দিন ঢাকা ডেমরা থানার ভুগাইর পূর্বপাড়া মহাকাশ স্কুল রোড নিবাসী মোছাঃ হামিদা বেগম নামের এক নারীকে মৃত মোঃ দুলাল হাওলাদারের দ্বিতীয় স্ত্রী দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময় দ্বিতীয়বার ওয়ারিশ সনদ প্রদান করেন। যাতে মৃত মোঃ দুলাল হাওলাদারের দ্বিতীয় স্ত্রী ও ৪ সন্তানদের সাথে মোছাঃ হামিদা বেগমসহ তার কন্যা র্ঝনা আক্তার সেতু ওয়ারিশ দেখিয়েছেন। এভাবেই তিনি বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

বিগত সময়ে ভুক্তভোগীরা ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একাধিকবার মামলা করলেও কোন সুফল পায়নি। ভুক্তভোগী আমিরুল ইসলাম ইউপি চেয়ারম্যান বশির সিকদারকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। 

এসব অভিযোগের বিষয় জানতে চেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানক বশির উদ্দিনকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

বাকেরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, চেয়ারম্যান বশির সিকদারের বিরুদ্ধে  চাঁদাবাজি মামলা হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি। এই মামলায় চেয়ারম্যান সহ অন্যান্য আসামি গ্রেফতারেও অভিযান চলছে। 

 
  

জিয়াউল /জাফরান

×