ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

হজ কার্যক্রম উদ্বোধনীতে প্রধানমন্ত্রী

মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারে

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ৮ মে ২০২৪

মুসলিম দেশগুলোর ঐক্য ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করে দোয়া মোনাজাত করেন

ডিজিটাল বাংলাদেশ করায় হয়রানি ছাড়াই ঘরে বসে হজের সব কাজ করা যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনারা দেখছেন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। সেখানে নারী ও ছোট শিশুদেরও রেহাই দেওয়া হচ্ছে না। কাজেই তাদের জন্য, বাংলাদেশের জন্য সেইসঙ্গে সারাবিশে^র মুসলিম উম্মাহর জন্য আপনারা (হজ যাত্রী) দোয়া করবেন।’
তিনি বলেন, বিশ্বের সব মুসলিম দেশ একসঙ্গে কাজ করলে ফিলিস্তিনিদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবসহ মুসলিমদের জন্য আরও ভালো অবস্থানে পৌঁছানো সহজ হতো। আজকে যদি আমাদের সকল মুসলিম দেশ এক হয়ে একযোগে কাজ করতে পারত, তাহলে আমরা এ বিষয়ে আরও অগ্রগামী হতে পারতাম।
বুধবার রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনা হজক্যাম্পে ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘হজ কার্যক্রম ২০২৪’ উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হুছামুদ্দিন চৌধুরী এবং বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান বক্তৃতা করেন।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার বক্তৃতা করেন। দু’জন হজ যাত্রী অনুষ্ঠানে নিজস্ব অভিব্যক্তিও ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০২৪ সালের হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা প্রদর্শিত হয় এবং শেষে দেশ-জাতি ও হজ যাত্রীদের সার্বিক মঙ্গল কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
এ বছর ৮৫ হাজার ২৫৭ বাংলাদেশী হজ পালন করতে পারবেন। তাদের মধ্যে চার হাজার ৫৬২ জন সরকারি ব্যবস্থাপনায় এবং বাকি ৮০ হাজার ৬৯৫ জন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করবেন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের নিয়ে এ বছরের হজ ফ্লাইট শুরুর কথা রয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথম হজ ফ্লাইট বিজি-৩৩০১ বিমানটি ৪১৯ যাত্রী নিয়ে সকাল সাতটা ২০ মিনিটে সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে। দেশের যে উন্নয়ন, সেটা দেশবাসী সবার সহযোগিতায় সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, শান্তির ধর্ম  ইসলাম এবং আমাদের মহানবী হজরত মুহম্মদ (স.) আমাদের সে শিক্ষাই দিয়ে গেছেন উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, কাজেই আমাদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে এ ধরনের কাজ যেন কেউ না করেন। মদ, জুয়া, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ করে মুষ্টিমেয় লোক আমাদের পবিত্র ধর্মের নামে যে বদনাম দিয়ে যায় সেটাই দুঃখজনক। আমি এটারও প্রতিবাদ করি সবসময়। কারণ আমরা শান্তিতে বিশ^াস করতে চাই। মানুষের উন্নয়ন করতে চাই।
ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তিনি একাই একমাত্র বোন (সরকারপ্রধান) হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই কথা সকলে এক হন এবং এ ধরনের অন্যায় অবিচার যেন আমাদের ওপর না হয় সেজন্য সকলেই দৃষ্টি দেবেন। আন্তর্জাতিক যে ফোরামে কথা বলেছেন সেখানেই ফিলিস্তিনিদের জন্য তার কণ্ঠ সোচ্চার ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি জায়গায় এর প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। কারণ ফিলিস্তিনিরা আরব ভূখ-ে তাদের জায়গা তারা পাবে, এটা তাদের অধিকার। এই অধিকার কেউ কেড়ে নিতে পারে না। কাজেই সেই অধিকার তাদের দিতে হবে।
১৯৭৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে জাতির পিতার ভাষণেরও উদ্ধৃতি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বলেন, আরব ভাইদের ওপর যে নিদারুণ অবিচার হয়েছে, অবশ্যই তার অবসান ঘটাতে হবে। অন্যায়ভাবে দখলকৃত আরব ভূমি অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে। আমাদের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে জেরুজালেমের ওপর। কাজেই জেরুজালেমে মুসলমানদের যে অধিকার এটা প্রতিষ্ঠা করার কথাও জাতির পিতাই তাঁর বক্তব্যে বলে যান।
প্রধানমন্ত্রী হজযাত্রীদের কাছে দেশ ও জাতির জন্য দোয়া চেয়ে বলেন, তাঁর সরকার হাজিদের জন্য যে সুযোগ সুবিধা সংবলিত হজ ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে সেটা ধরে রেখে যেন এটাকে আরও উন্নত করতে পারে সে দোয়াটা আপনারা করবেন। আর দেশের মানুষের জন্য দোয়া করবেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের মানুষের জন্য গোলা ভরা ধান দেন, পুকুর ভরা মাছ দেন, সুন্দর-উন্নত জীবন দেন। এ সময় তাঁর সরকার হজ ব্যবস্থাপনাকে আরও উন্নত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকু বলব যে আজকে আমরা হজ ব্যবস্থপনাকে প্রতিবারই যারা যাচ্ছেন যে কোনো সমস্যা হচ্ছে, সেটাকে আরও উন্নত করার পদক্ষেপ নিচ্ছি। আর এক্ষেত্রে সৌদি সরকার সবসময় আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। তিনি সৌদি বাদশাহ এবং যুবরাজকে এ জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তাঁদের সার্বিক সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ সরকার ক্রমান্বয়ে হজ ব্যবস্থাপনাটাকে আরও উন্নত করতে পেরেছে উল্লেখ করে টানা চতুর্থবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা করতে পেরেছি বলেই আপনারা আজকে সকলেই ভালোভাবে হজ করতে যেতে পারছেন, এটা আরও সহজ হয়েছে। এই হজ ক্যাম্পটার যথাযথ উন্নতি করে দিয়েছি। এখান থেকে একটি আন্ডারপাস করে দেওয়া হচ্ছে। যেটার মাধ্যমে হজক্যাম্প, বিমানবন্দর এবং রেলস্টেশনের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্থাপিত হবে। এখানে যাত্রী ও মালপত্র পরিবহনে এস্কেলেটর ও গলফ কার্টের মতো গাড়ি থাকবে। তাঁর সরকার সারাদেশে যে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করছে সেখানে হাজিদের প্রশিক্ষণ, রেজিস্ট্রেশনসহ সেবা প্রদানকারীদেরও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলেছেন এটা ঠিক। কিন্তু পাশাপাশি এই হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং ইসলামের সেবা করার জন্য ইসলামী ফাউন্ডেশন তিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশে বিশ^ ইজতেমার ব্যবস্থা এবং আয়োজনের জন্য জমি বরাদ্দ দিয়ে যান।
তিনি বলেন, ইসলাম সম্পর্কে মানুষের যেন সম্যক ধারণা হয়, সেই ব্যবস্থাটা তাঁর (বঙ্গবন্ধু) হাতেই করা। স্বাধীনতার পর মাত্র ৩ বছর ৭ মাস সময় তিনি পান তার মধ্যেই এসব পদক্ষেপ নেন। রেডিও-টেলিভিশনে কুরআন তেলাওয়াত, ঈদে মিলাদুন্নবীতে ছুটি প্রদান- এসব কিছুই জাতির পিতা করে গেছেন। অর্থাৎ এদেশের মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিটাকে সম্মান জানিয়ে সকলে যাতে সহজভাবে ধর্ম পালন করতে পারে সে ব্যবস্থটা তিনি করে দিয়ে যান।

×