ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ঘুষ নিয়েও সেবা না দেওয়ার অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর 

প্রকাশিত: ১৭:০৫, ৮ মে ২০২৪

ঘুষ নিয়েও সেবা না দেওয়ার অভিযোগ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র

ঘুষগ্রহণসহ আইনি সেবাপ্রার্থীদের হয়রানি করার বিস্তর অভিযোগ উঠেছে জামালপুরের বকশীগঞ্জের কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ঘুষের টাকা নিয়েও আইনি সেবা দেওয়ার বিপরীতে উল্টো হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাঁরা। 

এ নিয়ে সোমবার জামালপুর পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ঠান্ডারবন্দ গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেন। 

তবে অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার দাবি, তিনি নির্দোষ। তার বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ দেওয়া হচ্ছে। মূলত তিনি আইনানুসারেই পুলিশি সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের ঠান্ডারবন্দ গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মোশারফ হোসেনসহ তার স্বজনরা এসআই খাইরুল ইসলাম কর্তৃক প্রতারণার শিকার হয়েছেন। 

অভিযোগপত্রে মোশারফ হোসেন উল্লেখ করেছেন, ২০২৩ সালের ৩০ জুন রাতে কামালের বার্ত্তী বাজারে তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে অন্তত দেড় কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হয়। একই সময় অগ্নিকাণ্ডে ঠান্ডারবন্দ গ্রামের বাবু মিয়া, আব্দুল মজিদ মিয়া, আরফান আলী, সাধুরপাড়া ইউপির সাবেক মেম্বার আব্দুল হালিম, ঠনকারবন গ্রামের আলমাছ আলীর দোকান ঘরও পুড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

ঘটনার পর বাজারে উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে মোশারফ জানতে পারেন, পার্শ্ববর্তী মনিরুল ইসলামের দোকান ঘরের বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে আগুন লেগেছে। মোশারফের দোকান ব্যতিত অন্য কোনো অর্থ সম্পদ নেই। দোকান পুড়ে যাওয়ায় নিঃস্ব হয়ে পড়েন তিনি। 

এ নিয়ে ওই রাতেই আইনি প্রতিকার পেতে বকশীগঞ্জ কামালের বার্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মোশারফ। এরপর মোশারফকে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই খাইরুল ইসলাম বলেন, জিডি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে মোটা অংকের টাকা দিতে হবে। তাকে টাকা দিলে তিনি প্রতিপক্ষ দোকানদার মনিরুল ইসলামের কাছে ৫-৬ লাখ টাকা আদায় করে মোশারফসহ আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অপর ৬ দোকানদারের মাঝে ভাগ করে দিবেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া দোকানদারদের কাছে চাঁদা তোলে দুদফায় এসআই খাইরুলকে ১৬ হাজার টাকা দেয় মোশারফ। কয়েকদিন পর এসআই খাইরুল মোশারফকে জানায়, আইনি প্রতিকার পেতে হলে জামালপুর আদালতে যেতে হবে। 

মামলার আদেশ কীরূপ হলে সুবিধা হবে, এরকম একটি লিখিত কাগজ ধরিয়ে দিয়ে মোশারফকে জামালপুর আদালতের বকশীগঞ্জ থানার জিআরওর কাছে পাঠান এসআই খাইরুল। সেখানে গেলে সংশ্লিষ্ট জিআরও মোশারফের কাছে ৪০ হাজার টাকা চাওয়া হয়। বিষয়টি এসআই খাইরুলকে জানালে তিনি ৪০ হাজার টাকা তার কাছে জমা রাখতে বলেন মোশারফকে। টাকা দিলে কাজ হবে বলেও মোশারফকে জানান তিনি। এরপর এসআই খাইরুলকে ৪০ হাজার টাকা দিতে না পারায় আগুনে পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকেরা আইনি প্রতিকার পায়নি। 

অভিযোগপত্রে আরও জানা যায়, আগুনে পুড়ার মাসখানেক পর এলাকাবাসীর অনুদানের টাকায় মোশারফ দোকান পুনরায় চালু করলে ২৭ টাকা মূল্যের ২৫ কেজির দুই বস্তা চাল নিয়ে টাকা দেয়নি এসআই খাইরুল। চালের ২৭ শত টাকা এবং দোকানদারদের দেওয়া ঘুষের ১৬ হাজার টাকা ফেরত চাইলে উল্টো মাদক দিয়ে মোশারফের বিরুদ্ধে মামলা ঢুকে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছে এসআই খাইরুল। 

এছাড়া মোশারফের পক্ষালম্বন করায় জাহিদুল ইসলাম নভেল এবং সোবহান মিয়া নামে দুরসম্পর্কে তাঁর ভাতিজাকে থানায় নিয়ে হয়রানি করেছে এসআই খাইরুল। 

কামালের বার্ত্তী পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই মো. খাইরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। মূলত আমি নির্দোষ। 

জামালপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান জনকন্ঠকে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। যদি ঘটনার সত্যতা থাকে, অবশ্যই অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

 

এসআর

×