ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

সুন্দরবনের গহীনে দেড় কি.মি. এলাকা জুড়ে আগুন

বাবুল সরদার, বাগেরহাট

প্রকাশিত: ০৯:০৬, ৫ মে ২০২৪; আপডেট: ০৯:১০, ৫ মে ২০২৪

সুন্দরবনের গহীনে দেড় কি.মি. এলাকা জুড়ে আগুন

পুড়ছে সুন্দরবন। ছবি: জনকণ্ঠ

বাগেরহাটের সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির অদূরে লতিফের ছিলা নামক স্থানে আগুন নেভানোর কাজ রবিবার (৫ মে) ভোর থেকে আবার শুরু হয়েছে। 

বাগেরহাট, মোংলা, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের একাধিক ইউনিট বনরক্ষী ও স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।  

রবিবার ভোরে ঘটনাস্থল থেকে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো জনকণ্ঠকে জানান, আমরা ঘটনাস্থালে রয়েছি। আগুন নেভাতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে আতঙ্কিত হবার কিছু নেই। ঘটনাস্থলের চারপাশে ফায়ার লাইন কেটে আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। এই মুহুর্তে ঠিক কত জায়গা জুড়ে আগুন ছড়িয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আগুন লাগার কারন ও ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক সাইদুল আলম চৌধুরী জানান, আগুনের খবর পেয়ে এরই মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে কাজ শুরু করেছে। রাতে বনের মধ্যে কাজ করা সম্ভব না হওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল। তবে খুব ভোর থেকে আবার অগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়েছে।

ঘটনাস্থল থেকে স্থানীয় নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার দুপুরে আগুন লাগার খবর পেয়ে আমি তাৎক্ষনিক ২/৩ শত লোক নিয়ে বনে যাই এবং বনকর্মীসহ আমরা সবাই মিলে আগুন নেভাতে চেষ্টা করি। এসয়য় উর্দ্ধতন বন কর্মকর্তাদের খবর দেওয়া হয়। তারা ঘটনা স্থলে আসেন। আনুমানিক ১০ একর জায়গা জুড়ে আগুন জ্বলছে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় আগুন নেভাতে পর্যাপ্ত পনির অভাব রয়েছে। একটি নালা ও ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সোমবার দ্বিতীয় দিনেও ফায়ার সার্ভিস ও বনকর্মীদের আমরা স্থানীয় লোকজন এ কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, দশ একর জায়গা হলেও এর ব্যপ্তি প্রায় দেড় কিলোমিটার হবে। আগুন লাগা স্থানটি ঘুরে আসতে আমার প্রায় আধাঘন্টা সময় লেগেছে। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরের ভোলা নদী থেকে পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। 

সুন্দরবনে আগুনে। নিরাপত্তাহীনতায় বন্যপ্রাণীরা।সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির বনকর্মী মনিময় মন্ডল জনকণ্ঠকে বলেন, বনের লতিফের ছিলা নামকস্থানে প্রথম আগুনের সূত্রপাত হয়। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় তা দ্রুত বনের শুকনো লতাপাতায় ছড়িয়ে পড়ে। আমরা বনরক্ষীরা সাথে সাথে স্থানীয় এলাকাবাসীদের সহযোগীতায় আগুন নেভাতে সাধ্যমত চেষ্টা করি। বনের একটি বড় এলাকা জুড়ে বিক্ষিপ্তভাবে আগুন জ্বলছে। ফায়ার ব্রিগেডের একাধিক ইউনিট ঘটনা স্থলে পৌছে আগুন নেভাতে চেষ্টা করছে। সাথে স্থানীয়রা রয়েছেন।

এদিকে, মোরেলগঞ্জ উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউপি সদস্য আবু তাহের মিয়াবলেন, আমুর বুনিয়া ফাঁড়ির কাছেই আগুন লেগেছে। বেশ বড় এলাকা। প্রায় দেড়/দুই কিলোমিটার এলাকায় আগুন ছড়াইছে। সবাই চেষ্টা করছি নেভাতে। যেভাবে লাগছে তাতে আগুন থামানো কঠিন। পাশে পর্যাপ্ত পানি নেই। রাতে অন্ধকারের জন্য কাজ বন্ধ ছিল সোমবার সকাল থেকে আবার আগুন নেভানোর শুরু হয়েছে।

পশ্চিম আমুরবুনিয়া গ্রামের কৃষক ও বাওয়ালী পিন্টু মিস্ত্রিী জনকণ্ঠকে বলেন, আমার বাড়ির পূর্বদিকে বনের ২ থেকে আড়াই কি:মি: মধ্যে এ দিন বিকেলে আগুনের সুত্রপাত হয়। বর্তমানে মধু আহরণের মৌসুম চলছে। মধু সংগ্রহ করতে ওই স্থান থেকে মধু সংগ্রহকরীরা বনে যায়। ধারণা করছি তাদের ফেলে দেওয়া আগুনের সলতে (মশাল) থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় পানির সংকটের কারনে আগুন নেভাতে কষ্ঠ হচ্ছে।

শনিবার (৪ মে) দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকার লতিফের ছিলা নামক স্থানে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেব জানান।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মোহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, আগুন লাগার খবর পরে বনকর্মীরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছে। ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইউনিট পৌচেছে। আমিও ঘটনাস্থলে আছি। রাতে কাজ বন্ধ থাকলেও খুব ভোর থেকে আবার আগুন নেভানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। 

তবে কি কারণে আগুন লেগেছে বা কি পরিমাণ জায়গা আগুন ছড়িয়েছে সে বিষয়ে জানতে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) রানা দেবকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- রেঞ্জের জিউধার স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) ওবায়দুর রহমান এবং ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) রবিউল ইসলাম।

কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে আগুন লাগার সঠিক কারণ ও ক্ষক্ষতি নিরুপনসহ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তাছাড়া, এ ব্যাপারে স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া নানামুখী তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আশা করি প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।

বন বিভাগের সূত্র মতে, সুন্দরবনে গত ১৮ বছরে ২৮ বার অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় আগুনে প্রায় ৮০ একর বনভূমি পুড়েছে।

এসআর

×