ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৪ আষাঢ় ১৪৩১

দৈনিক মিলবে ২১ মিলিয়ন ঘনফুট

আরও গ্যাস পাওয়া গেল কৈলাশটিলার ৮ নম্বর কূপে

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৪৭, ২৪ মে ২০২৪

আরও গ্যাস পাওয়া  গেল কৈলাশটিলার  ৮ নম্বর কূপে

.

শুরু থেকেই বিপুল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল সিলেটের কৈলাশটিলার গ্যাসকূপগুলোতে। তাই নানা সময়ে এর বিভিন্ন কূপে চলে খনন কাজ। এরই ধারাবাহিকতায় কৈলাশটিলার নং কূপটিতে নতুন করে গ্যাস পেয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) দৈনিক অন্তত: ২১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে কূপটি থেকে। যার বাজারমূল্য হাজার ৬২০ কোটি টাকা।

এসব তথ্য জানিয়ে বাপেক্স বলছে, বিজয় ১২ রিগ ব্যবহার  করে চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে কূপটিতে খনন শুরু হয়। ৩৫০০ মিটার (এমডি) গভীরতা পর্যন্ত খনন করার পর গ্যাসের নতুন স্তর পাওয়া যায়। কূপটিতে প্রাপ্ত নতুন গ্যাস স্তর হরাইজোন- ৩৪৩৮-৩৪৪৭ মিটার গভীরতায় পারফোরেশন করে শুক্রবার ড্রিল স্টেম টেস্টিং (ডিএসটি) পরিচালনা করা হয়। ডিএসটি ফলাফল অনুযায়ী কূপটির স্তর থেকে দৈনিক প্রায় ২১ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এর ফ্লোয়িং ওয়েল হেড প্রেসার ৩৩৮৩ পিএসআই।

জানা যায়, এই কূপে স্ট্রাকচারের অবশিষ্ট উত্তোলনযোগ্য মজুত ১৯শবিলিয়ন ঘনফুট (আরপিএস ২০১০) কৈলাশটিলা-৮নং কূপে প্রাপ্ত হরাইজোন- এর প্রাথমিক গ্যাস মজুত ২৫-৪০ বিলিয়ন ঘনফুট যা নতুন মজুত হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।

কৈলাশটিলা নং কূপে গ্যাসের নতুন স্তর পাওয়া প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব জনকণ্ঠকে বলেন, এর বাজার মূল্য প্রায় হাজার ৬২০ কোটি টাকা (প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য ২২.৮৭ টাকা বিবেচনায়) এই কূপটিতে খনন প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ১৭২ কোটি টাকা। এরই মধ্যে আমরা গ্যাসের সন্ধান পেয়ে গেছি। গ্যাস গ্যাদারিং পাইপলাইন নির্মাণশেষে আগামী তিন মাসের মধ্যে এখান থেকে দৈনিক প্রায় ২১ মিলিয়ন ঘনফুট হারে গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।

সাম্প্রতিক সময় বিশ্বব্যাপী জ্বালানির বাজারে অস্থিরতার প্রভাব চরমভাবে পড়েছে দেশে। এরই মধ্যে বেড়েছে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য। মোট চাহিদার থেকে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসেরও সংকট রয়েছে। ফলে বাধ্য হয়েই চাহিদা মেটাতে উচ্চ মূল্যে আমদানি করতে হচ্ছে এলএনজি। কিন্তু বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও অবহেলিত অবস্থায়ই ছিল দেশীয় কূপগুলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সংকটে নড়েচড়ে বসে বাপেক্স পেট্রোবাংলা। দেশীয় কূপগুলোতে গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ওয়ার্কওভারে নেওয়া হয় ব্যাপক পরিকল্পনা। পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, গত বছরের শেষ মাসসহ আগামী বছরে দেশজুড়ে অন্তত: ৪৬টি কূপে অনুসন্ধান, উন্নয়ন এবং ওয়ার্কওভারের কাজ পরিচালনা করা হবে। এতে করে দেশের গ্যাসের মজুত এবং সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে শুধু খনন, ওয়ার্কওভার বা উন্নয়নকাজই নয় বরং প্রাপ্ত গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে যথাসময়ে সঞ্চালন লাইন তৈরিরও তাগিদ দিয়েছেন তারা।

জানা যায়, এখন দেশে মোট গ্যাসের চাহিদা গড়ে প্রায় ৩০০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয়ভাবে উৎপাদন সাড়ে তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট হলেও সরবরাহ হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর এলএনজি আমদানি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। প্রতিদিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির কথা থাকলেও বৈশ্বিক বাজারের অস্থিরতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সংকট থেকেই যাচ্ছে। এই চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হচ্ছে এলপিজি। আবার অনেক জায়গায় গ্যাসের চাপ কম থাকছে প্রায় সময়ই। এতে করে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষজনকে।

এর আগে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের টবগী- কূপ এর খননকাজ শুরুর মাধ্যমে নতুন উদ্যোমে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো নিয়ে কাজ শুরু করে বাপেক্স এবং পেট্রোবাংলা। বাপেক্স সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে বাপেক্স দৈনিক ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করছে। ছাড়া বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল) উৎপাদন করছে ৬১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড উৎপাদন করছে ১০৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সব মিলিয়ে এই তিন কোম্পানি দৈনিক মোট গ্যাস উৎপাদন করছে ৮৬৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। আর বাকিটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শেভরন আর আমদানি করা এলএনজি। কিন্তু এই উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে আগামী তিন বছর দেশজুড়ে অন্তত: ৪৬টি কূপ খনন করে আরও অন্তত: ৬১৮ মিলিয়ন গ্যাস উৎপাদন করার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শোয়েব জনকণ্ঠকে বলেন, দেশীয় কূপ খননে বাপেক্স সব সময়ই আন্তরিক। ২০২৩ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২৪ ২০২৫ সালে ১৭টি কূপে গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করব। তাছাড়া উন্নয়ন কাজ পরিচালনা করা হবে ১২টি ক্ষেত্রের। আর ওয়ার্কওভার করা হবে ১৭ট্রি। বাপেক্সের পাশাপাশি একসঙ্গে কাজ করবে এসজিএফএল এবং বিজিএফসিএল। এতে করে দেশীয় গ্যাসে একটা বিরাট পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে বলে আমি মনে করি।

জানা যায়, বাপেক্সের অধীনে ওয়ার্কওভারের কাজ চলছে সেমুতাং- কূপে, ড্রিলিং করা হচ্ছে শ্রীকাইল নর্থ-১এ (ড্রিলিং), সেমুতাং-, শরীয়তপুর- (ড্রিলিং), টবগী (ড্রিলিং), সুন্দলপুর- (ড্রিলিং), মুলাদি/হিজলা- (ড্রিলিং), বেগমগঞ্জ- ওয়েস্ট (ড্রিলিং), ইলিশা- (ড্রিলিং), ভোলা নর্থ- (ড্রিলিং) এর কাজ করা হবে। চলতি বছরের শুরু থেকে সেমুতাং- (ড্রিলিং), দোয়ারাবাজার ইস্ট- (ড্রিলিং), জকিগঞ্জ- (ড্রিলিং), ফেঞ্চুগঞ্জ সাউথ- (ড্রিলিং), শাহবাজপুর- (ড্রিলিং), শ্রীকাইল ডিপ- এর কাজ চলছে। ২০২৫ সালের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শ্রীকাইল- (ড্রিলিং), শাহবাজপুর- (ড্রিলিং), ভোলা নর্থ- (ড্রিলিং), মোবারকপুর ডিপ- এর কাজ করবে বাপেক্স। এসব কেন্দ্র থেকে অন্তত: দৈনিক ২৮১ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হবে।

একইভাবে এসজিএফএল ২০২২ সালে বিয়ানীবাজার- (ওয়ার্কওভার) করার পাশাপাশি কৈলাশটিলা- (ওয়ার্কওভার), কৈলাশটিলা- (ড্রিলিং), রশিদপুর- (ওয়ার্কওভার), রশিদপুর- (ওয়ার্কওভার), সিলেট- (ওয়ার্কওভার), রশিদপুর- গ্যাস গ্যাদারিং স্থাপন, সিলেট-১০ এর ড্রিলিং কাজ করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে কৈলাশটিলা- নতুন করে গ্যাসের স্তরের সন্ধান পাওয়ায় আশার আলো দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

×